এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
ঢাকা: দেশের প্রখ্যাত লালন ও লোকসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর অসুস্থতার খবর প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা আলোচনা ও গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন তাঁর ছেলে ইমাম জাফর নোমানি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর মায়ের চিকিৎসার জন্য কোনো প্রকার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন নেই এবং তাঁরা কারও কাছে সহায়তা চাননি। পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে শুধু দোয়া চাওয়া হয়েছে।
গুজব ঠেকাতে ছেলের জোরালো বক্তব্য: আজ সোমবার (৭ জুলাই) সাংবাদিক ও গীতিকার তানভীর তারেকের একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ফরিদা পারভীনের ছেলে ইমাম জাফর নোমানির বক্তব্য প্রকাশ্যে আসে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তিকর খবরকে প্রত্যাখ্যান করে ইমাম জাফর বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা যে কজন ভাই-বোন আছি, আমরা ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত (ওয়েল এস্টাবলিশড)। আমরা আমাদের মায়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম। আর আমরা যদি চিকিৎসা ব্যয়ভার নাও বহন করি, তাহলে আমার মায়ের যে টাকা-পয়সা আছে, তা দিয়েও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব।”
তিনি আরও জানান, ফরিদা পারভীনের অসুস্থতার খবর শুনে সরকারের উপদেষ্টা এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিল্পী ফরিদা পারভীন নিজেই বিনয়ের সঙ্গে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইমাম জাফর বলেন, “আমার আম্মা জানিয়েছেন, তিনি এ ধরনের কোনো সহযোগিতা নিতে চান না।” তিনি সবাইকে এ নিয়ে গুজব না ছড়িয়ে, তাঁর মায়ের সুস্থতার জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানান।
যেমন আছেন ফরিদা পারভীন, জানালেন স্বামী: ছেলের এই বক্তব্যের পাশাপাশি ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর স্বামী, যন্ত্রসংগীতশিল্পী গাজী আবদুল হাকিম। তিনি জানান, ফরিদা পারভীনের সার্বিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তিনি বলেন, “অসুস্থতা অনেক দিন ধরেই। ২০১৯ সাল থেকে তার কিডনির সমস্যা। ডায়ালাইসিস শুরু হওয়ার পর থেকেই শরীরটা বেশি খারাপ হয়ে পড়ে। ফুসফুস আর কিডনিজনিত নানা সমস্যায় ভুগছে সে।”
গাজী আবদুল হাকিম আরও বলেন, “গত কয়েক মাসেই তাকে তিনবার আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। শরীর এখন প্রচণ্ড দুর্বল। উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি পায় না। হাঁটতেও পারে না।” তিন দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়, তবে গতকাল থেকে তাঁকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
শিল্পীর বর্ণাঢ্য জীবন: ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নজরুলসংগীত দিয়ে শিল্পী জীবন শুরু করলেও, ফরিদা পারভীনের আত্মা খুঁজে পায় লালনের দর্শনে। সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে তালিম নিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন লালনসংগীতের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৭ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ২০০৮ সালে জাপানের সম্মানজনক ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার লাভ করেন।
সব মিলিয়ে, এই বরেণ্য শিল্পী এখন অসুস্থতার সঙ্গে লড়ছেন। তাঁর পরিবার তাঁর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে তাঁর দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া চেয়েছেন।
বাংলাফ্লো/এইচএম
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0