বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘শত্রু সম্পত্তি’ আইনের মারপ্যাঁচে পতৌদি পরিবার, ১৫ হাজার কোটির সম্পত্তি হারাতে পারেন সাইফ

এই রায়ে পতৌদি পরিবার এক বড়সড় ধাক্কা খেল এবং তাঁদের বিশাল পৈতৃক সম্পত্তির ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল

ছবি-সংগৃহীত

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক

ঢাকা: বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার পৈতৃক সম্পত্তির ভবিষ্যৎ গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ভারতের ‘শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯৬৮’-এর আওতায় এই বিশাল সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তীব্র হয়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এই বিষয়ে পতৌদি পরিবারের করা একটি আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় এই সংকট নতুন মাত্রা পেয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

এই জটিলতার শেকড় প্রোথিত রয়েছে সাত দশকেরও বেশি পুরনো ইতিহাসে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ভোপাল ছিল একটি প্রিন্সলি স্টেট, যার শেষ নবাব ছিলেন হামিদুল্লাহ খান। তিনি ছিলেন সাইফ আলি খানের বাবা, প্রয়াত মনসুর আলি খান পতৌদির মাতামহ (মায়ের বাবা)।

নবাব হামিদুল্লাহ খানের তিন কন্যার মধ্যে বড়, আবিদা সুলতান, ছিলেন তাঁর সম্পত্তির প্রধান উত্তরাধিকারী। কিন্তু ১৯৫০ সালে তিনি ভারতে তাঁর সমস্ত দাবি ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তই পরবর্তীকালে পতৌদি পরিবারের জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ায়।

আইনের মারপ্যাঁচ

আবিদা পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর, ভারত সরকার ‘শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯৬৮’ প্রয়োগের সুযোগ পায়। এই আইন অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি দেশভাগের পর শত্রু দেশ (যেমন পাকিস্তান বা চীন) হিসেবে ঘোষিত দেশে চলে গেছেন, ভারতে থাকা তাঁদের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করে সরকার অধিগ্রহণ করতে পারে।

এই আইনের ভিত্তিতেই ২০১৪ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘোষণা করে যে, নবাব হামিদুল্লাহ খানের সম্পূর্ণ সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

পতৌদি পরিবারের আইনি লড়াই

সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে আবেদন করেন সাইফ আলি খান। তাঁর যুক্তি ছিল, নবাবের বড় মেয়ে আবিদা পাকিস্তানে চলে গেলেও, তাঁর দ্বিতীয় কন্যা সাজিদা সুলতান ভারতেই থেকে যান। সাজিদা সুলতান বিয়ে করেন সাইফের দাদা ইফতিকার আলি খান পতৌদিকে। ফলে, ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সাজিদাই ওই সম্পত্তির আইনত উত্তরাধিকারী হন এবং সেই সূত্রে তাঁর নাতি সাইফ আলি খানেরও এই সম্পত্তিতে অংশ রয়েছে।

এই আবেদনের ভিত্তিতে আদালত একটি দীর্ঘমেয়াদী স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। এমনকি ২০১৯ সালে অন্য একটি আদালত রায় দিয়েছিল যে, সাজিদা সুলতানই ওই সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকারী।

সর্বশেষ পরিস্থিতি

দীর্ঘদিন আইনি লড়াই চলার পর, ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেয়। অবশেষে, গত শুক্রবার (৪ জুলাই, ২০২৫) বিচারপতিরা সাইফ আলি খানের মূল আবেদনটিও খারিজ করে দেন। আদালতের এই রায়ের ফলে, ১৫ হাজার কোটি টাকার এই বিশাল সম্পত্তি অধিগ্রহণ করার ক্ষেত্রে সরকারের সামনে আর কোনো আইনি বাধা রইল না। এই রায়ে পতৌদি পরিবার এক বড়সড় ধাক্কা খেল এবং তাঁদের বিশাল পৈতৃক সম্পত্তির ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ল।


বাংলাফ্লো/এইচএম

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0