এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
ঢাকা: শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তারপর এক বিতর্কিত অধ্যায়ে ক্যারিয়ারে গ্রহণ, এবং অবশেষে সব ঝড় সামলে আবারও অভিনয়ে প্রত্যাবর্তন— বলিউড অভিনেত্রী শ্বেতা বসু প্রসাদের জীবন যেন এক সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। দেহব্যবসার মতো গুরুতর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে যিনি খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন, সেই তিনিই এখন ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ও ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস’-এর মতো সফল প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে নিজের প্রতিভার জানান দিচ্ছেন।
স্বপ্নের শুরু এবং হারিয়ে যাওয়া: শ্বেতা বসু প্রসাদের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল এক গগনচুম্বী সাফল্য দিয়ে। ২০০২ সালে ‘মকড়ি’ চলচ্চিত্রে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর ২০০৫ সালে ‘ইকবাল’ সিনেমায় ‘খাদিজা’র ভূমিকায় তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে। কিন্তু এই উজ্জ্বল সূচনার পরও তিনি যেন বলিউড থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করেন।
জীবনের অন্ধকার অধ্যায়: ২০১৪ সালের ৩১শে আগস্ট, হায়দরাবাদের বানজারা হিলসের একটি হোটেল থেকে শ্বেতা বসু প্রসাদকে দেহব্যবসার অভিযোগে গ্রেপ্তার করার খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, শ্বেতা অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন। হোটেল থেকে আটক করার পর তাঁকে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
এই ঘটনার পর শ্বেতা গণমাধ্যমে জানান, তাঁকে জোর করে এই কাজে ফাঁসানো হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, দারিদ্র্যের কারণে নয়, বরং তাঁকে ভুল বুঝিয়ে এই অনৈতিক কাজে জড়ানো হয়েছিল। তবে এই বিতর্কের মাঝে তিনি আরও এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। একবার সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, শুধু তিনি নন, বলিউডের অনেক নায়িকাকেই ক্যারিয়ার বাঁচাতে জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এই ধরনের কাজ করতে হয়, যা ইন্ডাস্ট্রির অন্ধকার দিকটিকেই ইঙ্গিত করে।
অভিযোগ থেকে মুক্তি এবং নতুন ইনিংস: এই ঘটনার প্রায় তিন মাস পর, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে, হায়দ্রাবাদের একটি নিম্ন আদালত প্রমাণের অভাবে শ্বেতাকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। এই আইনি মুক্তির পরই শ্বেতা তাঁর জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার প্রস্তুতি নেন।
ধীরে ধীরে তিনি আবারও অভিনয় জগতে ফিরে আসেন এবং নিজের জাত চেনান। ‘দ্য তাশখন্দ ফাইলস’ (২০১৯) এবং ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ (২০২২)-এর মতো বক্স অফিসে সফল ও সমালোচক-নন্দিত সিনেমায় তাঁকে দেখা গেছে। জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ 'ক্রিমিনাল জাস্টিস'-এর চতুর্থ সিজনেও তিনি পঙ্কজ ত্রিপাঠীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলা ছবি ‘এক নদীর গল্প’-এ মিঠুন চক্রবর্তী ও যিশু সেনগুপ্তর সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেন।
সব মিলিয়ে, শ্বেতা বসু প্রসাদের জীবন এক অসম লড়াই এবং ঘুরে দাঁড়ানোর এক অসাধারণ গল্প, যা প্রমাণ করে— প্রতিভাই শেষ কথা বলে।
বাংলাফ্লো/এইচএম
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0