লাইফস্টাইল ডেস্ক
ঢাকা: কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কোরবানি অর্থ উৎসর্গ করা। নিজের প্রিয় কিছু আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কোরবানি। ইসলামের বিধান অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত দিনগুলোতে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। পশু জবাইয়ের মাধ্যমে কোরবানি করতে হয়। কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কোরবানির পশু সুস্থ, সবল ও দৃশ্যমান কোনো শারীরিক ত্রুটিমুক্ত হতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন— প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কোরবানির বিধান নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে সেই চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময়, যা তিনি তাদের জীবিকা হিসেবে দান করেছেন। (সূরা হজ, আয়াত : ৩৪)
কোরবানির পশু নির্বাচনের সময় যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত তা হলো, পশুর শারীরিক গুণাবলি, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং শরিয়াহর দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্যতা। কারণ, শরিয়াহ অনুযায়ী ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি করলে সেটি কবুল হয় না।
তাই পশু নির্বাচন করার সময় চেষ্টা করা উচিত যেন সেটি হয়— সুস্থ ও রোগমুক্ত। বাহ্যিকভাবে আকর্ষণীয়, অর্থাৎ দেখতে ভালো। হৃষ্টপুষ্ট ও ভালো মানের। কোনো অঙ্গহানি বা বড় শারীরিক ত্রুটি নেই এমন।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শিংযুক্ত, মোটা-তাজা একটি মেষ কোরবানি করেন, যার চোখ, চেহারা ও পা ছিল মিটমিটে কালো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩১২৮)
ইসলামী শরিয়াহ নির্দিষ্ট কিছু ত্রুটির কথা বলেছে, যা থাকলে পশু কোরবানির উপযোগী বিবেচিত হবে না। সেগুলো হলো—
সম্পূর্ণ অন্ধ : যে পশু একেবারে চোখে দেখে না।
প্রকট রোগাক্রান্ত : যে পশুর শরীরে অসুস্থতা স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
চলাফেরায় অক্ষম (পঙ্গু): যার পা বা অঙ্গ কাজ করে না এবং চলাফেরা করতে কষ্ট হয়।
গুরুতর আহত : যার অঙ্গ ভাঙা বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। (তিরমিজি: ১৪৯৭)
দাঁতের সমস্যা : যদি পশুটির দাঁত এতটাই পড়ে যায় যে সে ঠিকভাবে খাবার চিবাতে পারে না।
শিং সম্পূর্ণ গোড়া থেকে ভাঙা : যাতে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে অর্ধেক ভাঙা বা জন্মগতভাবে শিং না থাকলে সমস্যা নেই। (রদ্দুল মুহতার, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)
কান বা লেজ অর্ধেক বা তার বেশি কাটা : এমন হলে কোরবানি বৈধ নয়। তবে যদি অর্ধেকের কম কাটা হয় অথবা জন্মগতভাবে ছোট হয়, তাহলে চলবে। (তিরমিজি, হেদায়া)
কোরবানির পশু কেনার আগে ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত তার চোখ, কান, লেজ এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক আছে কি না।
হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের আদেশ করতেন যেন আমরা কোরবানির পশুর কান ও চোখ ভালোভাবে যাচাই করি। তিনি নিষেধ করতেন এমন পশু দ্বারা কোরবানি করতে, যার কান কাটা, ছেঁড়া বা ছিদ্র করা। (সুনানে আবু দাউদ: ২৮০৪)
তবে কিছু ত্রুটি আছে যা থাকলেও ঐ পশু কোরবানির উপযুক্ত। যেমন- পাগল পশু, একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে এমন পশু, চর্মরোগ থাকলে, স্বভাবগত এক অণ্ডকোষবিশিষ্ট হলে, বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে পশু বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম হলে সেই পশু কোরবানীর অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না। তবে সবচেয়ে ভালো একদম সুস্থ ও দেখতে আকর্ষণীও পশু দিয়ে কোরবানী করা।
কোরবানীর কোন পশুর বয়স কত হতে হয়?
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হয়। উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু-মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মতো মনে হয়, তাহলে তা দিয়েই কোরবানি বৈধ। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটি পশু শুধু এক ব্যক্তিই কোরবানি দিতে পারবে। গরু, মহিষ, উট সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি মিলে কোরবানি দিতে পারবে।
বর্তমানে কোরবানীর পশুর দাম ও আকার নিয়ে চলে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যা নষ্ট করে কোরবানীর তাৎপর্য। এ ধরণের প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকা উচিত আমাদের সকলের। কোরবানী হোক ত্যাগের, উদ্দেশ্য হোক পরম করুণাময়ের সন্তুষ্টি অর্জন। পবিত্র ঈদুল আযহার খুশি ছড়িয়ে পরুক প্রতিটি ঘরে।
বাংলাফ্লো/আফি
Comments 0