সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৩৮ কোটির ক্রীড়া কমপ্লেক্স এখন গোচারণ ভূমি, উদ্বোধনের ২ বছরেও তালাবদ্ধ

“অনেকদিন থেকে অবহেলায় পড়ে আছে। কেউ আসে না, কোনো খেলাধুলা হয় না। এজন্য গেটে ধান শুকাচ্ছি। ভেতরে সাপ, মৌমাছির চাক দিয়ে ভর্তি হয়েছে।”

ছবি-সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধি

রংপুর: উদ্বোধনের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও, অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রংপুর বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বিশাল স্থাপনাটি এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে, জিমের দামি সরঞ্জামে পড়েছে ধুলার আস্তরণ এবং ভবনে ধরেছে ফাটল। রক্ষণাবেক্ষণ এবং ক্রীড়া কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দীর্ঘ সময়েও কোনো জনবল নিয়োগ না দেওয়ায়, এটি এখন ‘অভিভাবকহীন এতিম শিশুর’ মতো পড়ে আছে।

রংপুর মহানগরীর উত্তম এলাকায় ১০ একর জমির ওপর নির্মিত এই কমপ্লেক্সে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ, ইনডোর স্টেডিয়াম, হোস্টেল এবং জিমনেসিয়াম। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোটি কোটি টাকার ক্রীড়া সরঞ্জাম ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ মিয়া বলেন, “অনেকদিন থেকে অবহেলায় পড়ে আছে। কেউ আসে না, কোনো খেলাধুলা হয় না। এজন্য গেটে ধান শুকাচ্ছি। ভেতরে সাপ, মৌমাছির চাক দিয়ে ভর্তি হয়েছে।”

২০২৩ সালের ২ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর আগে, ২০২২ সালে একটি মাত্র ফুটবল টুর্নামেন্ট ছাড়া, এখানে আর কোনো খেলার আয়োজন হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাবেক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, এই কমপ্লেক্স নির্মাণের সময়, বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে, তৎকালীন সরকারের লোকজন এবং রংপুর বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম কয়েক কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। তিনি এই বিষয়ে দুদক এবং সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ আরিফা জাহান বীথি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রংপুর বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে অনেক বড় ইনডোর সুবিধা আছে। মেয়েদের থাকার ব‍্যবস্থা আছে। অথচ বছরের পর বছর ধরে এটি ফেলে রাখা হয়েছে। ...আমার কাছে মনে হয়েছে ওখানে সরকারের পুরো টাকাটাই ক্ষতি হয়েছে।”

এই বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব সেলোয়ারা বেগম বলেন, “কিভাবে আমরা প্রোগ্রাম হাতে নিতে পারি, কিভাবে কাজ করবো সেটার একটি মিটিং হবে। ...এটা অবহেলায় পড়ে থাকাটা দুঃখজনক। বিগত বছরগুলোতে কেন এরকম হলো সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।”

সব মিলিয়ে, রংপুর বিভাগের নারী ক্রীড়াবিদদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে নির্মিত এই ৩৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন অবহেলা এবং দুর্নীতির এক করুণ নিদর্শনে পরিণত হয়েছে।

বাংলাফ্লো/এইচএম 

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0