Logo

বার্ধক্য ও যৌবন নিয়ে বিজ্ঞান দিচ্ছে অবিশ্বাস্য তথ্য!

উনিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতকের শুরুর দিকে পশ্চিমা বিশ্বে অবসরের ধারণা চালু হওয়ার পর থেকে মানুষের কর্মক্ষমতা নয়, জন্মের পর কতো বছর কেটেছে — সেটিই বৃদ্ধ বয়স নির্ধারণের প্রধান মানদণ্ড হয়ে ওঠে।

ফাইল ছবি

লাইফস্টাইল ডেস্ক

ঢাকা: সবাই চেষ্টা করেন চিরকাল তরুণ থাকার। এটা অনেক মানুষেরই অন্যতম লক্ষ্য। বার্ধক্য প্রতিরোধী বিভিন্ন পণ্যের বাজারের মূল্য বর্তমানে ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩২ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বার্ধক্যকে দূরে রাখতে মানুষ বলিরেখা প্রতিরোধী ক্রিম মাখে, সাপ্লিমেন্ট খায়, ওজন তুলে ব্যায়াম করে এবং আরও নানা ধরনের চেষ্টা করে।

যদিও বার্ধক্যকে প্রায়ই একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা হিসেবে দেখানো হয়, এটি যতটা মনে হয় তার চেয়ে বেশি পরিবর্তনযোগ্য। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, মধ্য বয়স থেকে বার্ধক্যের দিকে যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট জৈবিক সীমারেখা নেই, বলছেন ক্যালিফোর্নিয়ার বাক ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন এজিং-এর সভাপতি ও সিইও এরিক ভারডিন।

তিনি বলেন, 'মানুষের মধ্যে বিপুল পরিমাণ ভিন্নতা রয়েছে। তিনি মনে করেন, কারো বয়স নির্ধারণে জৈবিক বয়স — অর্থাৎ শরীরের কোষ ও টিস্যুগুলোর বয়স — ব্যবহার করা উচিত, শুধু জন্মের পর কতো বছর কেটেছে তা নয়।'

এই ধারণাটি প্রচলিত ধারা বদলাতে শুরু করেছে। সাইকোলজি অ্যান্ড এজিং জার্নালে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো মানুষকে কখন বৃদ্ধ বলা হবে, সেই বয়সসীমা ক্রমেই উপরের দিকে সরছে।

বার্লিনের হামবোল্ড্ট ইউনিভার্সিটির গবেষক মার্কুস ভেটস্টেইনের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে মধ্যবয়স্ক এবং বৃদ্ধ মানুষরা এখনকার দিনে ১০ থেকে ২০ বছর আগের সমবয়সীদের চেয়ে নিজেদেরকে বেশি তরুণ মনে করেন।

মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়া এই প্রবণতার একটি কারণ হতে পারে। তবে ফলাফলে এটা-ও দেখা গেছে যে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশে, মানুষ বার্ধক্যকে নেতিবাচকভাবে দেখে।

ভেটস্টেইন ও তার সহকর্মীরা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এ এক ইমেইলে লিখেছেন, 'মানুষ বৃদ্ধ বয়সকে পেছনে ঠেলে রাখতে চায়, কারণ তারা এই অল্পইচ্ছার জীবন পর্যায়ে প্রবেশ করতে চায় না।'

বার্ধক্যের ইতিহাস

মানুষের ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় জুড়ে একজনকে বৃদ্ধ হিসেবে দেখা হতো তার কাজ করার ক্ষমতা বা পরিবার ও সমাজের জন্য কতটুকু অবদান রাখতে পারছেন, তার ওপর ভিত্তি করে।

উনিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতকের শুরুর দিকে পশ্চিমা বিশ্বে অবসরের ধারণা চালু হওয়ার পর থেকে মানুষের কর্মক্ষমতা নয়, জন্মের পর কতো বছর কেটেছে — সেটিই বৃদ্ধ বয়স নির্ধারণের প্রধান মানদণ্ড হয়ে ওঠে।

গড়ে একজন আমেরিকান ৬২ বছর বয়সে অবসর নেন, যা সাধারণত বিভিন্ন সরকার ও কর্তৃপক্ষের চোখে 'বৃদ্ধ' হওয়ার সময় হিসেবে ধরা হয়। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে গেলেও এবং বড় বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটলেও ৬০ থেকে ৬৫ বছরের এই সীমারেখা বহুদিন ধরেই প্রায় একই রকম রয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, বার্ধক্যই বেশির ভাগ অসংক্রামক রোগের — যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও অ্যালঝেইমারসের — সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ। বেশির ভাগ মানুষই জীবনের বড় একটা অংশ এমন রোগের প্রভাব নিয়ে কাটান। কিছু হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষের অন্তত একটিমাত্র দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, আর প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের দুই বা ততোধিক রোগ রয়েছে।

নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু জন্মসাল দিয়ে 'বৃদ্ধ বয়স' নির্ধারণ করা ঠিক না।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

বাংলাফ্লো/আফি

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0