বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আইইউ: এক রূপকথার গল্প যা সিনেমার চেয়েও নাটকীয়

“খাবার বলতে কিছুই ছিল না। ঠান্ডা, পোকামাকড়ে ভর্তি একটি ছোট ঘরে থাকতাম। দাদি হেয়ার ক্লিপ বিক্রি করে সংসার চালাতেন।” গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আইইউ কিশোরী বয়সেই অডিশন দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু বারবার তাঁকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।

ছবি-বাংলাফ্লো

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক

ঢাকা: তাঁকে বলা হয় কোরিয়ার ‘ন্যাশন'স লিটল সিস্টার’ বা ‘জাতীয় ছোট বোন’। ২০২৫ সালেও তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ধনী নারী গায়িকা। কিন্তু এই খ্যাতির আড়ালে লুকিয়ে আছে এক অবিশ্বাস্য সংগ্রামের গল্প, যা যেকোনো সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। বিদ্রূপ, প্রত্যাখ্যান, এমনকি প্রতারণার শিকার হয়েও, নিজের লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন লি জি ইউন, যাঁকে বিশ্ব চেনে আইইউ (IU) নামে।

১৯৯৩ সালে সিউলে জন্মগ্রহণ করা আইইউর শৈশব কেটেছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। পরিবার ঋণে ডুবে যাওয়ায়, তাঁকে এবং তাঁর ছোট ভাইকে দাদির কাছে থাকতে হতো। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “খাবার বলতে কিছুই ছিল না। ঠান্ডা, পোকামাকড়ে ভর্তি একটি ছোট ঘরে থাকতাম। দাদি হেয়ার ক্লিপ বিক্রি করে সংসার চালাতেন।”

গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আইইউ কিশোরী বয়সেই অডিশন দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু বারবার তাঁকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। তিনি ২০টিরও বেশি অডিশনে ব্যর্থ হন, যার মধ্যে জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্টের মতো বড় সংস্থাও ছিল (যারা পরে প্রকাশ্যে স্বীকার করে, আইইউকে ফিরিয়ে দেওয়া তাদের বড় ভুল ছিল)। শুধু তাই নয়, ভুয়া এজেন্সিগুলো অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যেত।

অবশেষে ১৫ বছর বয়সে লোয়েন এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাঁর অভিষেক হয়। কিন্তু প্রথম গান ‘লস্ট চাইল্ড’ বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয় এবং প্রথম মঞ্চেই তাঁকে দর্শকদের কাছ থেকে ‘নেমে যাও’ বলে টিটকারি শুনতে হয়।

কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া তাঁর ‘গুড ডে’ (Good Day) গানটি কোরিয়াজুড়ে ঝড় তোলে। এই একটি গানই তাঁকে রাতারাতি তারকাখ্যাতি এনে দেয় এবং তিনি পান ‘নেশনস লিটল সিস্টার’ খেতাব। সাফল্যের পর তিনি প্রথমেই তাঁর পরিবারের সমস্ত ঋণ শোধ করেন।

আইইউ শুধু একজন গায়িকাই নন, তিনি একজন সফল অভিনেত্রীও বটে। ‘হোটেল ডেল লুনা’ এবং সাম্প্রতিক সময়ের সাড়া জাগানো সিরিজ ‘হোয়েন লাইফ গিভস ইউ ট্যানজারিনস’-এ তাঁর অভিনয় বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি একাধারে গীতিকার, প্রযোজক এবং বড় বড় ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর। সেলেব্রিটি নেট ওয়ার্থ অনুযায়ী, ২০২৫ সালে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার।

প্রিয় বন্ধুদের অকাল মৃত্যুতে সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেও, বারবার ফিরে এসেছেন আরও শক্তিশালী হয়ে। আইইউর এই জীবন কাহিনী অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাসের এক অনন্য অনুপ্রেরণা।

বাংলাফ্লো/এইচএম 

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0