এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
ঢাকা: ব্র্যাড পিট কে টপ গান: ম্যাভেরিক’-এ যুদ্ধবিমানের ককপিটে বসিয়ে যিনি দর্শকদের শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতা দিয়েছিলেন, সেই পরিচালক জোসেফ কোসিনস্কি এবার নিয়ে এলেন ফর্মুলা ওয়ানের গতির দুনিয়া। ব্র্যাড পিট অভিনীত নতুন সিনেমা ‘এফ ওয়ান’ শুধু একটি স্পোর্টস ড্রামা নয়, এটি ইঞ্জিনের গর্জন, টায়ারের ঘর্ষণ এবং আবেগের উত্থান-পতনের এক শৈল্পিক জার্নি, যা দর্শকদের আড়াই ঘণ্টার জন্য রেসিং সিটে বসিয়ে রাখে।
সিনেমার গল্প শুরু হয় সনি হেইসকে (ব্র্যাড পিট) দিয়ে, যিনি ৩০ বছর আগে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ফর্মুলা ওয়ান থেকে ছিটকে পড়া এক কিংবদন্তি রেসার। বর্তমানে তিনি প্রায় ভবঘুরে, জুয়াড়ি এবং মাঝেমধ্যে ট্যাক্সি চালান। কিন্তু গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেলেই তাঁর ভেতরের রেসার সত্তা জেগে ওঠে।
তাঁর পুরোনো বন্ধু রুবেন (হাভিয়ের বারদেম), যিনি ‘অ্যাপেক্স’ নামের একটি ফর্মুলা ওয়ান টিমের মালিক, তাঁকে আবারও রেসিং ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনেন। তবে এবার চালক হিসেবে নয়, বরং দলের তরুণ এবং প্রতিভাবান কিন্তু উদ্ধত চালক জশুয়া পিয়ার্স (ড্যামসন ইদ্রিস)-এর পরামর্শদাতা হিসেবে। এখান থেকেই শুরু হয় দুই প্রজন্মের চালকের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব, বোঝাপড়া এবং সময়কে হার মানানোর এক রুদ্ধশ্বাস লড়াই।
এই সিনেমার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর নির্মাণশৈলী। চিত্রগ্রাহক ক্লদিও মিরান্দার ক্যামেরার কাজ এতটাই নিখুঁত যে, দর্শক নিজেকে গাড়ির চালকের আসনে অনুভব করবেন। আসল এফ ওয়ান রেসিং ট্র্যাকে শুটিং, বাস্তব এফ ওয়ান ড্রাইভারদের অংশগ্রহণ এবং ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন লুইস হ্যামিল্টনের প্রযোজক হিসেবে থাকা— সবকিছু মিলিয়ে সিনেমাটি বাস্তবতার এক নতুন মাপকাঠি তৈরি করেছে। ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজেট যে স্বার্থক হয়েছে, তা পর্দার প্রতিটি ফ্রেমে স্পষ্ট।
অস্কারজয়ী সুরকার হান্স জিমারের আবহসংগীত সিনেমাটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। রেসিং ট্র্যাকের রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত হোক বা সনির একাকীত্বের যন্ত্রণা— সবকিছুই জিমারের সুরে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
ষাট পেরোনো ব্র্যাড পিট ‘সনি হেইস’ চরিত্রে অনবদ্য। তাঁর চোখের চাহনি, ক্লান্তি এবং অভিজ্ঞতার মিশ্রণ চরিত্রটিকে এক অন্য গভীরতা দিয়েছে। তরুণ চালকের ভূমিকায় ড্যামসন ইদ্রিসও তাঁর আবেগ, জেদ এবং সহানুভূতি দিয়ে দারুণ অভিনয় করেছেন। তাঁদের দুজনের রসায়নই সিনেমার মূল চালিকাশক্তি।
‘এফ ওয়ান’ সিনেমার গল্প হয়তো কিছুটা চেনা ছকের— এক আন্ডারডগের হিরো হয়ে ওঠার কাহিনি। কিন্তু পরিচালক জোসেফ কোসিনস্কি ড্রামার চেয়ে গতির ঝড়কেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আবুধাবির শেষ ল্যাপ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত দর্শকদের এক আবেগময় এবং গতিময় আনন্দযাত্রা উপহার দেয়। বড় পর্দায় না দেখলে এই সিনেমার আসল মজাটা পাওয়া যাবে না।
বাংলাফ্লো/এইচএম
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0