বিনোদন ডেস্ক

ঢাকা: ভারতীয় মডেল ও অভিনেত্রী উরফি জাভেদ—এই নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে নানা ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী ও চমকপ্রদ পোশাকের ছবি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বরাবরই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। কখনো উদ্ভট পোশাকে, কখনো সাহসী বক্তব্যে—উরফি মানেই যেন একরাশ চমক ও অপ্রত্যাশিত বিনোদন। তবে এই সবকিছুর পেছনে রয়েছে এক যন্ত্রণাময় অতীত ও সংগ্রামের গল্প, যা হয়তো অনেকেই জানেন না।

উরফির শোবিজে যাত্রা শুরু হয়েছিল টেলিভিশনের মাধ্যমে। সেখানেই অভিনয়ের পা রাখেন তিনি। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা ছিল তিক্ততায় ভরা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে উরফি জানান, নবাগত অভিনেত্রী হিসেবে টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে তার সঙ্গে বহুবার কুৎসিত ও অপমানজনক আচরণ করা হয়েছে। "কিছু কিছু সেটে রীতিমতো কুকুরের মতো ব্যবহার করা হতো," বলেন তিনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, অনেক প্রোডাকশন হাউজ পারিশ্রমিক না দেওয়া কিংবা কথা দিয়ে টাকা কেটে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে।

এই প্রতিকূলতা থেকেই তার মধ্যে জন্ম নেয় নিজের মতো করে বাঁচার চেতনা। উরফি জানান, তিনি পাঞ্জাবের মেয়ে এবং ছোটবেলা থেকেই কড়া পারিবারিক শাসনের মধ্যে বড় হয়েছেন। এমনকি খোলামেলা পোশাক তো দূরের কথা, গলাবন্ধ জামা ও ওড়না পরা ছিল বাধ্যতামূলক। আর সেই ওড়না একটু সরে গেলেই বাবার হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হতো তাকে। এমন পরিবেশেই তার শৈশব কেটেছে।

তবে সময়ের সাথে সাথে তিনি বুঝতে পারেন, এই বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়াই তার জন্য প্রয়োজন। নিজের শরীর, মন এবং জীবনযাপন নিয়ে তিনি আর কোনো রকম সামাজিক বা পারিবারিক চাপে থাকতে চান না। উরফির ভাষায়, "আমি কোনো বাধায় জড়াতে চাই না। নিজের শরীর ও মন খোলা লাগে আমার। তাই বেশিরভাগ সময় আমি অন্তর্বাস পরি না। অন্তর্বাস পড়লে নিজেকে পরাধীন মনে হয়। এটা একেবারেই আমার চয়েস।"

টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির প্রতি বিতৃষ্ণা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আর কখনো টিভিতে কাজ করবেন না। এমনকি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এ অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতাও তার ভালো ছিল না। ওটিটি সংস্করণে অংশ নিয়েও এক সপ্তাহের মাথায় বাদ পড়েন তিনি।

তবে বিতর্ক, ট্রোল কিংবা সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে উরফি জাভেদ নিজের পথ নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন। তিনি কাজ করেছেন ওটিটি কনটেন্টে, অভিনয় করেছেন সাম্প্রতিক বলিউড চলচ্চিত্র লাভ সেক্স অর ধোকা ২-তেও।

উরফি জাভেদ নিছক একটি নাম নয়, বরং একটি প্রতীক—যেখানে সাহস, প্রতিবাদ, ব্যতিক্রমধর্মী অভিব্যক্তি এবং নিজের শর্তে বাঁচার বার্তা লুকিয়ে আছে। তিনি হয়তো প্রচলিত সৌন্দর্য ও শালীনতার মানদণ্ডে মাপজোকের যোগ্য নন, কিন্তু নিজের মতো করে বাঁচার সাহসটুকু অনেকেরই অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাফ্লো/আফি