মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দ্রুত খেলে কেনো ওজন বাড়ে?

কোনো কিছু খাওয়ার পরে আমাদের পেট ভরেছে কিনা আমাদের পাকস্থলী মস্তিষ্কে সেই সিগনাল পাঠাতে ২০ মিনিট সময় নেয়। এর মানে দ্রুত খাওয়া বলতে বোঝায় কেউ যদি খাবার খেতে ২০ মিনিটের কম সময় নেয়।

ফাইল ছবি

লাইফস্টাইল ডেস্ক

ঢাকা: \আস্তে আস্তে খাও!\, \মন দিয়ে খাও\, \খাওয়ার মাঝে কথা বলতে হয় না\ – এই কথাগুলো আমরা অনেকেই ছোটবেলায় খাওয়ার সময় শুনেছি। যারা এই কথাগুলো বলতেন তারা যে ঠিকই বলতেন সেটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

মনোযোগ দিয়ে খাওয়া, ধীরে ধীরে চিবানো মস্তিষ্ক এবং পেটের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।

খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ লেসলি হেইনবার্গ, দ্রুত খাওয়া ও ধীর গতিতে খাওয়ার স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে দীর্ঘ সময় গবেষণা করেছেন।

সেখান থেকে তিনি জানতে পেরেছেন শুধু সময় নিলে খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

এখন আপনি দ্রুত খান নাকি ধীরে ধীরে খান সেটা কীভাবে বুঝবেন। এক্ষেত্রে একটা সহজ থিওরি আছে।

কোনো কিছু খাওয়ার পরে আমাদের পেট ভরেছে কিনা আমাদের পাকস্থলী মস্তিষ্কে সেই সিগনাল পাঠাতে ২০ মিনিট সময় নেয়। এর মানে দ্রুত খাওয়া বলতে বোঝায় কেউ যদি খাবার খেতে ২০ মিনিটের কম সময় নেয়।

বেশি সময় ধরে খেলে, অর্থাৎ ২০ মিনিট বা তার বেশি সময় নিলে খাবার ভালো হজম হয়, পেট বেশিক্ষণ ভরা থাকে, এটা ওটা খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এ কারণে সঠিক ওজন বজায় রাখা সহজ হয়।

অন্যদিকে দ্রুত খেলে ভালোভাবে চাবানো হয় না, একবার গ্রাস খাওয়ার পর আরেকটি গ্রাস নেওয়ার মধ্যে বিরতি দেয়া হয় না।

তাছাড়া ব্রেনও পেট ভরার সিগন্যাল পায় না। এতে যেটা হয় বেশি বেশি খাওয়া হয়ে যায় এবং শরীর ভারী লাগে।

এই দ্রুত খাওয়ার কয়েকটি কারণ আছে, একটি হলো ব্যস্ততা বা কাজের চাপ। অনেকে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থেকেও দ্রুত খেয়ে থাকেন।

আবার দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে, কঠোর ডায়েট ফলো করলে অনেক ক্ষুধা লাগে এবং দ্রুত খাওয়া হয়।

কিন্তু দ্রুত খাওয়ার ফলে খাবার আনন্দ নিয়ে বা খাবারটা উপভোগ করে খাওয়ার হয় না। এতে হজমের সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়।

দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস অনিচ্ছাকৃত ওজন বৃদ্ধির একটি বড় কারণ।

হারবার্ট হেল্থ পাবলিকেশন্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খুব দ্রুত খান তাদের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয়। কারণ মস্তিষ্ক ২০ মিনিটের আগে বুঝতে পারে না যে পাকস্থলী পর্যাপ্ত খাবার পেয়েছে।

ফলে বেশি খাওয়া হয়, শরীরে ক্যালোরিও যায় বেশি। এতে ওজন বাড়ে।

গ্রিসের লাইকো জেনারেল হাসপাতালের গবেষণায় দুটি দলকে আইসক্রিম খেতে দেয়া হয়। এক দলকে বলা পাঁচ মিনিটের মধ্যে খেতে। আরেক দলকে বলা হয় আধা ঘণ্টা ধরে ধীরে ধীরে খেতে।

দেখা যায়। যারা আস্তে আস্তে খেয়েছে তাদের শরীর থেকে এমন এক হরমোন নিঃসরণ হয়েছে যা আমাদের পেট ভরা থাকার সিগনাল দেয়। ফলে পরিমিত খাবারেও পেট ভরা থাকার অনুভূতি হয়।

২০১৮ সালে চীনে জাতীয় পর্যায়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের স্থূলতার বড় কারণ ছিল তাদের দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস।

এক হাজার মানুষের ওপর পাঁচ বছর ধরে চালানো এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যারা দ্রুত খান তাদের স্থূলতা, হাই প্রেশার, হাই ব্লাড সুগার, হাই ট্রাইগ্লিসারাইড, পেটের চর্বি এবং অস্বাভাবিক কোলেস্টেরল মাত্রার মতো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভোগার হার, ধীরে ধীরে খাওয়া মানুষদের চাইতে ১১ শতাংশ বেশি।

এসব কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাফ্লো/আফি

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0