লাইফস্টাইল ডেস্ক
ঢাকা: আপনার কি প্রায়ই ক্লান্ত লাগে, বুক ধড়ফড় করে, কিংবা অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট হয়? এমন লক্ষণগুলো অনেক সময় আমরা অবহেলা করি। অথচ এগুলো হতে পারে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার ইঙ্গিত।
বিশ্বজুড়েই রক্তশূন্যতা একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। তবে বাংলাদেশে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি এই সমস্যায় আক্রান্ত হন। কেন এমনটা হয়? এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়—চলুন জেনে নিই বিস্তারিতভাবে।
রক্তশূন্যতা কী?
রক্তশূন্যতা মানে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া নয়। বরং শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন না থাকাকে রক্তশূন্যতা বলা হয়। হিমোগ্লোবিনের কাজ হলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করা। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, নানা জটিলতাও তৈরি হতে পারে।
নারীরা বেশি আক্রান্ত কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের শারীরিক গঠনের কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা বেশি রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হন।
১. ঋতুস্রাব (Menstruation):
প্রতি মাসেই রজঃস্রাবের সময় নারীদের শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যায়। কারও ক্ষেত্রে রক্তপাত বেশি বা দীর্ঘস্থায়ী হলে রক্তশূন্যতা তৈরি হতে পারে।
২. গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান:
গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সন্তান জন্মের সময়ও অনেক নারীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
৩. ল্যাকটেশন (দুধ উৎপাদন):
সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় দেহে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
৪. পুষ্টির অভাব ও কৃমি সংক্রমণ:
বাংলাদেশে অনেক নারী এখনও সুষম ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার পান না। তদুপরি কৃমি শরীরের আয়রন শোষণ করে নিয়ে রক্তশূন্যতা বাড়িয়ে তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী—
৬–৫৯ মাস বয়সী ৪০% শিশু, ৩৭% গর্ভবতী নারী, ১৫–৪৯ বছর বয়সী ৩০% নারী রক্তশূন্যতায় ভোগেন। বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক।
অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল আলম জানান, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো মাত্রায় রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত।
রক্তশূন্যতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন:
আয়রনের ঘাটতি (সবচেয়ে সাধারণ), ভিটামিন বি-১২ বা ফলিক অ্যাসিডের অভাব, লোহিত রক্তকণিকার দ্রুত ক্ষয়, কিডনি, লিভার, থাইরয়েড সমস্যাজনিত জটিলতা, থ্যালাসেমিয়া বা রক্তের ক্যান্সার, কৃমি সংক্রমণ বা দীর্ঘমেয়াদি রক্তপাত
সর্বক্ষণ দুর্বলতা ও ক্লান্তি, স্বল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা, হৃদকম্পন বেড়ে যাওয়া বা বুক ধড়ফড়, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কর্মশক্তি হ্রাস ইত্যাদি রক্তশূন্যতার লক্ষণ।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে নিয়মিত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন- পালংশাক, কচুশাক, শিম, কাঁচাকলা, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুধ, খেজুর, বেদানা, গরু বা খাসির মাংস ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত।
ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়তা করে। তাই লেবু, আমলকি, কমলালেবুর মতো ফল খেতে পারেন প্রতিদিন। বেশি চা-কফি খাওয়া এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলো আয়রন শোষণ কমিয়ে দেয়।
প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট বা চিকিৎসা নিন, তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন না। ঘাটতি বেশি হলে চিকিৎসক রক্ত দেওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন।
রক্তশূন্যতা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। নারীদের ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতার ঝুঁকি বেশি হলেও সচেতনতা, সুষম খাদ্যগ্রহণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এটি সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব।
শারীরিক দুর্বলতাকে অবহেলা না করে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্যই সম্পদ—তাই নিজেকে সুস্থ রাখুন, সতর্ক থাকুন।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাফ্লো/আফি
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0