রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

চর্যাপদের টানে ঢাকায় হার্ভার্ডের শিক্ষক, সাধকদের কাছে নিলেন পাঠ!

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. কিথ ই কান্তু এবং ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রাচীন সাধনার সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানচর্চার এই সংযোগ চর্যাপদ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

ছবি-সংগৃহীত

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক

ঢাকা: কর্মশালা, সম্মাননা এবং চর্যাগীতির সুর মূর্ছনায় শেষ হলো ‘চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব ২০২৫’। ভাবনগর ফাউন্ডেশনের আয়োজনে গত শুক্রবার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসবের সমাপনী দিন। দিনব্যাপী এই আয়োজনটি ছিল প্রাচীন চর্যাপদের সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানচর্চা এবং তৃণমূলের সাধকশিল্পীদের এক অনন্য মিলনমেলা, যেখানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাউল-সাধকরা এক মঞ্চে মিলিত হয়েছিলেন।

প্রশিক্ষণ কর্মশালা: আন্তর্জাতিক ও অ্যাকাডেমিক মেলবন্ধন এদিন বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় চর্যাপদের গানের প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এই কর্মশালায় সাধিকা সৃজনী তানিয়া, শাহ আলম দেওয়ান এবং বাউল অন্তর সরকার চর্যাপদের বিভিন্ন পদের প্রশিক্ষণ দেন। কর্মশালাটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল অংশগ্রহণকারীদের বৈচিত্র্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধকশিল্পীদের পাশাপাশি এতে অংশ নেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. কিথ ই কান্তু এবং ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রাচীন সাধনার সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানচর্চার এই সংযোগ চর্যাপদ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

সাধকদের কণ্ঠে হাজার বছরের সুর: সন্ধ্যায় শুরু হয় চর্যাপদ গানের আসর। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধকশিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে লুইপা রচিত চর্যাপদের প্রথম পদ “কাআ তরুবর” পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে চুয়াডাঙ্গার আব্দুল লতিফ শাহ, পাবনার ফকির আবুল হাশেম, সুনামগঞ্জের মণীন্দ্র দাশ, কিশোরগঞ্জের অন্ধ আল আমিন সরকার পিপাসী এবং নেত্রকোণার মিনা পাগলীর মতো শিল্পীরা চর্যাপদের বিভিন্ন পদ সংগীতাকারে পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।

চর্যাপদের দার্শনিক গুরুত্ব: সমাপনী ভাষণে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার চর্যাপদের পুনর্জাগরণের দার্শনিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “চর্যাপদের পুনর্জাগরণ কেবল একটি সংগীত বা সাংস্কৃতিক কর্ম নয়, এটি বাংলার চিন্তা ও উপলব্ধির ইতিহাসে আত্ম-উপস্থিতির পুনর্পাঠ। বাংলার সহজিয়া দর্শনের ধারায় এই পথ এক র‌্যাডিকাল মুক্তির ভাষা, যেখানে দেহ, ভাব ও ঈশ্বর একই সূত্রে গাঁথা।”

অনুষ্ঠানে চর্যাপদের গানে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শাহ আলম দেওয়ান এবং বাউল অন্তর সরকারকে সম্মাননা প্রদান করা হয় এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে, এই উৎসবটি চর্যাপদের মতো এক প্রাচীন জ্ঞানকাণ্ডকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক সফল প্রচেষ্টা।

বাংলাফ্লো/এইচএম 

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0