জেলা প্রতিনিধি
ফেনী: প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিন দশকেরও বেশি সময় রাজনীতিমুক্ত থাকার পর এবার ফেনীর জয়নাল হাজারী কলেজে ছাত্ররাজনীতি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ কলেজে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম হয়নি। শৃঙ্খলা ও রাজনীতিমুক্ত পরিবেশের জন্য জেলার মধ্যে বিশেষ সুনাম রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তবে গত সোমবার (১১ আগস্ট) কলেজে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সদস্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন জানান, সদস্য সংগ্রহ শেষে কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাবেক শিক্ষার্থী নূর হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের মতো দল যে কাজ করেনি, এখন একটি সংগঠনের নেতারা তা করে দেখালেন। বিষয়টি কোনোভাবেই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। প্রিয় আঙিনায় এমন কাণ্ড দেখে দূর থেকে খুবই আফসোস হচ্ছে। আশা করি সবাই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।
অভিভাবকদের মধ্যে ওসমান বিন নবী বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে অভিভাবকদের টাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান হয়, সেখানে রাজনীতি মুক্ত রাখা উচিত। আজকের এমন পরিস্থিতির জন্য কলেজ প্রশাসনের নীরবতা ও মেরুদণ্ডহীনতা দায়ী। কারণ অতীতে এ কলেজ কমিটিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা থাকলেও শুধু কলেজ প্রশাসনের কঠোরতার জন্য কোনো ধরনের কমিটি দিতে পারেনি। এখনই সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।
কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরে এসেছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ কলেজ রাজনীতি মুক্ত ছিল। এসব বিষয় কলেজের অধ্যক্ষ দেখভাল করবেন। আমরা উনার নিয়ন্ত্রণেই কাজ করি। এটির জবাবও উনি দেবেন।
কলেজের অধ্যক্ষ এনামুল হক জানান, রোববার (১০ আগস্ট) ছাত্রদলের একজন সদস্য ফোনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির কথা জানান। পরদিনও কলেজে এসে কল দিলে তাদের কর্মসূচি শেষ করতে বলেন তিনি। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি আগে থেকে অবগত ছিলাম না, বলেন অধ্যক্ষ।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। এ দেশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্ররা অসামান্য অবদান রেখেছেন। সেই হিসেবে জয়নাল হাজারী কলেজ কেন পিছিয়ে থাকবে? কলেজে সদস্য সংগ্রহে ফরম বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে কমিটি গঠন করা হবে।
গভর্নিংবডির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক এমএ খালেক বলেন, দীর্ঘসময় ধরে জেলার মধ্যে কলেজটি রাজনীতিমুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভালো ছিল। কোনো ধরনের হানাহানি বা বিশৃঙ্খলা ছিল না। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকে মনে করছেন এটি আমার ইচ্ছেতে হচ্ছে। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন ও যুগ্ম সম্পাদক শওকত আলী জুয়েল পাটোয়ারীকে যেকোনো প্রোগ্রাম কলেজের বাইরে করতে বলেছিলাম।
তিনি আরও জানান, ছাত্রদলের ফরম বিতরণের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছেন এবং এ বিষয়ে কলেজ গভর্নিং বডি ও জেলা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বাংলাফ্লো/সিএস
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0