বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: সারাদিন নানা আয়োজন, উৎসব এবং উত্তেজনার মধ্যে নিয়ে শেষ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সকাল থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে। ডাকসুর ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের বাইরেও চলছে সমর্থনদের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। দুপুরের পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা দলে দলে ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকায় জড়ো হতে থাকেন।
যদিও শাহবাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়েল চারপাশে র্যাব, বিজিবিসহ বিপুল সংখ্যাক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে পুলিশের বিশেষ ফোর্স ডিবি, সিটিটিসি, এটিইউসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ বলছে, যেকোনও ধরণের অপ্রতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকালের পর শাহবাগ, হাইকোর্ট মোড়, চানখারপুল, পলাশী মোড়, নীলক্ষেত মোড় এবং নিউমার্কেট এলাকায় নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রাস্তায়, চায়ের দোকানে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে দাঁড়িয়ে তারা নির্বাচনের খোঁজখবর নিতে থাকেন। এ সময় তারা স্লোগান না দিলেও ছোট ছোট দলে অবস্থান করে নিজেদের দলের অবস্থান জানান দিচ্ছে।
শাহবাগ মোড়ে জামায়াত শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর গণমাধ্যমকেবলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ঘিরে চারপাশে প্রচুর উৎসুক জনতা ভিড় করছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ফোর্স মোতায়েন আছে। আমরা ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি এবং সবাইকে বোঝাচ্ছি। যেহেতু ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ সবার জন্য সীমিত, তাই অনেকেই বাইরে জড়ো হচ্ছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি।’
উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ভোট শেষে চলছে ভোট গণণা। আর বাইরে ভিড় বাড়তে থাকে সমর্থন ও নেতাকর্মীরা। পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও চারপাশে অবস্থান নিয়ে আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কৌশলগতভাবে বিভিন্ন চেকপোস্ট ও প্রবেশপথে আরও সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। বিকাল থেকে পুলিশের আরও ডিপ্লয়মেন্ট বাড়াতে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের অনেকেই আজ এখানে এসেছে শুধু নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটাধিকার যাতে সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারেন।’
একইভাবে জামায়াত-শিবিরপন্থী এক সাবেক ছাত্রনেতা বলেন, ‘এই নির্বাচন শুধু ডাকসুর নয় বরং জাতীয় রাজনীতিতেও প্রতিফলন ফেলবে। তাই আমরা কাছ থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।’
ডিএমপির একাধিক ইউনিট এবং বিজিবি সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত মোতায়েন ছিল সোয়াট ও ডগ স্কোয়াড টিম। ফলে বিএনপি-জামায়াতপন্থী নেতাকর্মীরা মূলত চারপাশেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে নীলক্ষেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও ‘গণতন্ত্র তোরণ’ গেইট থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। সড়কে একপাশে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহফুজুল হক গণমাধ্যমকেবলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আশেপাশে উৎসুক জনতার ভিড় আছে, এর মধ্যে কিছু বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থক কর্মী থাকলেও কোনও বড় পর্যায়ের নেতাকে চোখে পড়েনি। সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলার মতো পরিস্থিতিও হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষায় কমিশনারের নির্দেশনায় পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করে তবে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।’
ওই এলাকার আফজাল উদ্দিন নামে এক দোকানদার বলেন, ‘বিকাল থেকেই শাহবাগ আর নীলক্ষেতের দিকে ভিড় বাড়তে দেখি। সবাই পরিচিত চেহারা, অনেকে আগে মিছিলে দেখেছি। পুলিশের উপস্থিতির কারণে তারা শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে।’
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান গণমাধ্যমকেবলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতাকর্মী অবস্থান নিলেও তারা শান্তিপূর্ণভাবে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। এখন পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমিও ঘটনাস্থলে আছি। তাছাড়া আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে আছেন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি না হয়।’
রাজনীতিবিদরা বলছেন, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি ও জামায়াতের এই অবস্থান তাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তারই প্রতিফলন। দীর্ঘদিন পর এমন একটি সুযোগে নেতাকর্মীরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে চাচ্ছেন। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের অবস্থান প্রমাণ করছে যে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বাংলাফ্লো/এসও
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0