এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
ঢাকা: পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার এক গ্রাম থেকে ইতালির ভেনিস— এই অবিশ্বাস্য যাত্রাটি সম্পন্ন করেছেন তরুণী নির্মাতা অনুপূর্ণা রায়। আইটি খাতের চাকরি ছেড়ে, পরিবারের অমত সত্ত্বেও, তিনি সিনেমার স্বপ্নকে ধাওয়া করেছিলেন। আর সেই স্বপ্নেরই এক বিরাট স্বীকৃতি মিলল এবার। তিনি তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সংস অব ফরগটেন ট্রিজ’-এর জন্য বিশ্বের অন্যতম সেরা সম্মানজনক ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের অরিজ্জন্তি বিভাগে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। তিনিই প্রথম কোনো ভারতীয় নির্মাতা, যিনি এই বিভাগে পুরস্কার জিতলেন।
অনুপূর্ণার সিনেমাটি মুম্বাই শহরের দুই নিঃসঙ্গ ও আহত নারীর গল্প বলে। থুয়া (নাজ শেখ) একজন নবীন অভিনেত্রী, যিনি সংসার চালাতে মাঝেমধ্যে যৌনকর্মী হিসেবেও কাজ করেন। অন্যদিকে, শ্বেতা (সুমি বাঘেল) একজন কল সেন্টারের কর্মী, যিনি বিয়ের বাজারে জীবনসঙ্গী খুঁজছেন। শহরের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া এই দুজন নারী একে অপরের কাছে আশ্রয় খুঁজে পান।
পুরস্কার গ্রহণ করে, মঞ্চে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে অনুপূর্ণা এই সম্মানকে ভারতবাসীর উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, “এই চলচ্চিত্র সেসব নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, যাঁদের কণ্ঠস্বর চেপে রাখা হয়েছে, যাঁদের উপেক্ষা করা হয়েছে ও যাঁদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আশা করি, এই জয় আরও অনেক নারীর কণ্ঠকে শক্তি জোগাবে।”
২০২২ সাল পর্যন্ত অনুপূর্ণা ছিলেন একজন সাধারণ আইটি চাকরিজীবী। কিন্তু সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি চাকরি ছাড়েন। মুম্বাইয়ের আজাদ নগরের এক ভাড়া ফ্ল্যাটেই তিনি ছবির চিত্রনাট্য লেখেন এবং সেখানেই শুটিং করেন। তিনি বলেন, “সিনেমা বানানোর চেয়ে মনে হতো আমরা স্মৃতি তৈরি করছি। রান্না করতাম, শুটিং করতাম ও চিৎকার করতাম। সেই স্মৃতিই আজ ভেনিসের মঞ্চে আলো ছড়িয়েছে।”
নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপের সহায়তায় তৈরি এই সিনেমাটি ভেনিসে প্রিমিয়ারের পর সাত মিনিটেরও বেশি সময় ধরে ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ পেয়েছিল। পুরুলিয়ার এক মেয়ের এই বিশ্বজয় ভারতের স্বাধীন সিনেমার জন্য এক নতুন এবং গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করল।
বাংলাফ্লো/এইচএম
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0