শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজবাড়ীতে কবর থেকে তুলে মরদেহ পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরীফ আল রাজীব এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

রাজবাড়ী:  রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সম্প্রতি মারা যাওয়া নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা নামে এক ব্যক্তির দরবারে হামলা চালিয়েছে একদল বিক্ষুব্ধ লোক। তারা ‘শরিয়ত পরিপন্থি’ পদ্ধতিতে দাফন করা হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের কিছু সময় পর এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যাওয়া পুলিশের দুটি পিকআপ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

খবর পেয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরীফ আল রাজীব এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, জুমার নামাজের পর ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির উদ্যোগে ‘কালিমা, আজান, দুরুদ বিকৃতিকারী ও নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবি করা ভন্ড নুরাল পাগলা’র আস্তানা উচ্ছেদ এবং কাবা শরীফের আকৃতিতে ১২ ফুট উঁচুতে কবর স্থাপনের প্রতিবাদে গোয়ালন্দে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশের পরে উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার আস্তানায় ভাঙচুর করতে যায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লা পাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন নুরাল পাগলা। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করলে জনরোষ তৈরি হয়। পরে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ মুচলেকা দিয়ে তিনি এলাকা ছাড়েন। কয়েকদিন পর তিনি আবার দরবারে ফিরে কার্যক্রম শুরু করেন। গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে প্রথম জানাজা ও ভক্তদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাতে সাড়ে ১০টার দিকে মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। যে স্থাপনার ওপর দাফন করা হয় সেখানে পবিত্র কাবার আদলে রং করা হয়। এ বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি’ গঠন করেন। এই কমিটি গোয়ালন্দ উপজেলা মডেল মসজিদসহ রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসনের কাছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান চান।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মারুফ বলেন, গোয়ালন্দ হাসপাতালে নুরাল পাগলের মাজার-সংক্রান্ত মারামারিতে ২২ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে ১৯ জনকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়েছে। তিনজন ভর্তি ছিলেন, কিন্তু পরে তারা নিরাপত্তার জন্য সেচ্ছায় ফরিদপুর মেডিকেলে চলে গেছেন।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার আস্তানায় গিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

বাংলাফ্লো/এফএ

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0