Logo

প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

ডা. শাহের মতে, নারীর ডিম্বাণুর স্বাস্থ্য স্থায়ী হলেও পুরুষের শুক্রাণু মাত্র ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন করে তৈরি হয়। এ সময়ের মধ্যে জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে শুক্রাণুর গুনগত পরিবর্তন করা সম্ভব।

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাফ্লো লাইফস্টাইল

ঢাকা: অনেকদিন ধরেই সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, সন্তান জন্মদানে সমস্যা হলে সেটির দায় মূলত নারীর ওপরই বর্তায়। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। প্রসিদ্ধ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিটাল ক্লিনিক Maven-এর প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. নীল শাহের মতে, এটি একটি ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষের স্বাস্থ্যও সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ডা. শাহ বলেন, আমরা শত শত বছর ধরে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে শুক্রাণু পর্যবেক্ষণ করলেও এখনো শুক্রাণুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য জানি না। যদিও বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে প্রায় ৫০% সমস্যা পুরুষের স্বাস্থ্যজনিত কারণে ঘটে। এর পরও ১৮% থেকে ২৭% ক্ষেত্রে পুরুষদের কোনও ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। এমনকি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আইভিএফ (IVF) চক্র পুরুষের শুক্রাণুর যথাযথ বিশ্লেষণ ছাড়াই সম্পন্ন হয়।


শুক্রাণুর স্বাস্থ্য: পুরুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্য চিত্রের প্রতিফলন

ডা. শাহ জানান, শুক্রাণুর ভলিউম, সংখ্যা, গঠন এবং গতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে কেবল সন্তান জন্মদানের সক্ষমতাই নয়, বরং পুরুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। অনেক সময় শুক্রাণু স্বাস্থ্যই metabolic health সংক্রান্ত সমস্যার প্রাথমিক সংকেত দেয়। এটি এক ধরনের “চেক ইঞ্জিন লাইট” হিসেবে কাজ করতে পারে।

নারীদের মাসিক চক্রের মতো পুরুষদের কোনও দৃশ্যমান মাসিক পরিবর্তন না থাকলেও তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের মাধ্যমেও দেহের অভ্যন্তরীণ অবস্থা প্রকাশ পায়। তাই, আরও বেশি পুরুষ যদি নিয়মিত শুক্রাণু পরীক্ষা করান, তাহলে তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে যেমন সচেতনতা বাড়বে, তেমনি সন্তান ধারণের জন্য নারীদের ওপর অযাচিত চাপও অনেক কমবে। অনেক ক্ষেত্রেই এতে ব্যয়বহুল IVF-এর বিকল্প ও সহজ পদ্ধতিতে সমাধান পাওয়া সম্ভব।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১,০০০ নারীর ওপর পরিচালিত একটি জরিপে তিন-চতুর্থাংশ নারী জানিয়েছেন, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়ে তারা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। ৮৩% নারী তাদের ব্যয় কমাতে বাধ্য হয়েছেন এবং ৫২% নারী তাদের সঞ্চয় ভেঙে খরচ করতে বাধ্য হয়েছেন। অধিকাংশ নারী মনে করেন, সন্তান ধারণে ব্যর্থতার দায়ভার কেবল তাদের একার ওপর বর্তেছে, যা অনেকের সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

ডা. শাহ বলেন, “নারীরা প্রায়ই পুরুষের সমস্যার জন্য ‘সারোগেট’ হয়ে দাঁড়ান।” IVF-এর সময় নারীরাই ওষুধ গ্রহণ, চিকিৎসা ও বিভিন্ন কষ্টকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান, যদিও সমস্যা অনেক সময় পুরুষের দিক থেকেও হয়ে থাকে।


শুক্রাণু উন্নত করা সম্ভব: মাত্র ৬০ দিনে!

ডা. শাহের মতে, নারীর ডিম্বাণুর স্বাস্থ্য স্থায়ী হলেও পুরুষের শুক্রাণু মাত্র ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন করে তৈরি হয়। এ সময়ের মধ্যে জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে শুক্রাণুর গুনগত পরিবর্তন করা সম্ভব।

শুক্রাণু অত্যন্ত সংবেদনশীল; খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং পরিবেশগত বিষক্রিয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করে। তাই, নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে খুব কম সময়ের মধ্যেই শুক্রাণুর গুণগতমান বাড়ানো সম্ভব। তবে সমস্যা হলো, অনেক পুরুষ এখনো ক্লিনিকে গিয়ে শুক্রাণু পরীক্ষা করাতে অনীহা প্রকাশ করেন। যদিও বর্তমানে বাসায় বসেও পরীক্ষার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করলে পুরুষরা সহজেই নিজেদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন। নিজের শুক্রাণুর মান চোখের সামনে দেখতে পারাটা পুরুষদের জন্য অনেক সময়ই বড় এক প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

ডা. শাহ বলেন, “যদি আপনি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করেন, তবে আপনি ভালো মানের শুক্রাণু উৎপন্ন করতে পারবেন।”


শুক্রাণুর স্বাস্থ্য বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জীবনধারার পরিবর্তন

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

খাদ্যাভ্যাস সরাসরি শুক্রাণুর গুণগতমানের সাথে সম্পর্কিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মূলত উদ্ভিদভিত্তিক খাবার, ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, এবং লিন প্রোটিন (যেমন মাছ ও চিকেন) বেশি খান—অর্থাৎ যারা মেডিটেরিয়ান ডায়েট অনুসরণ করেন—তাদের শুক্রাণুর স্বাস্থ্য সাধারণ ডায়েট অনুসারীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ ভালো হয়। বিশেষ করে, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং লাল মাংস কম খাওয়া শুক্রাণু সংখ্যার উন্নতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

২. নিয়মিত শরীরচর্চা

যদিও নির্দিষ্ট কোনও মাত্রায় ব্যায়াম করলে কতটা লাভ হবে তা নির্ধারণ করা কঠিন, তবে গবেষণা বলছে, সাধারণভাবে চলাফেরা এবং শরীরচর্চা শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

জাতীয় স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম অথবা ৭৫ মিনিট উচ্চমাত্রার ব্যায়াম করা সুপারিশ করা হয়। ওজন কমানো, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত শরীরচর্চা পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।

৩. ধূমপান এড়িয়ে চলা

ধূমপান শুক্রাণুর গুণগত মানের মারাত্মক ক্ষতি করে। শুধু ধূমপানই নয়, নিয়মিত গাঁজা সেবনও শুক্রাণুর গতিশীলতা ও সংখ্যা কমিয়ে দেয়। এমনকি ধূমপানের পরিমাণ সামান্য কমালেও তার ইতিবাচক প্রভাব শুক্রাণুতে পড়তে পারে।

ডা. শাহ বলেন, “একটু কমানোই বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।”

বর্তমানে বন্ধ্যাত্বের যন্ত্রণা এবং এর আর্থিক ও মানসিক চাপ অনেক পরিবারকেই ভোগাচ্ছে। পুরুষরা যদি আগে থেকেই নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জীবনযাপনের পরিবর্তন আনেন, তাহলে শুধু নিজেদেরই নয়, সঙ্গিনীর উপর থেকেও এক বিশাল চাপ কমাতে পারবেন।

ডা. শাহের মতে, \পুরুষদের প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রতি ১ ডলার খরচ করলে, ভবিষ্যতে আইভিএফ চিকিৎসার জন্য ২ ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।\ তাই এখনই সময়, পুরুষদের নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়ার এবং যৌথভাবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার।

সূত্র: Alexa Mikhail’s reporting

বাংলাফ্লো/আফি

Related Posts বিনোদন

Leave a Comment

Comments 0