বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেছেন, একজন মায়ের বুকই হচ্ছে নবজাতকের প্রথম হাসপাতাল। অপরিণত বা ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতকের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর আশ্রয় হলো মায়ের বুক।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত র্যালির আগে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম বলেন, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার পদ্ধতি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, কিন্তু এর মূল শক্তি হলো ‘ঘনিষ্ঠতা’। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় যেটা অনেক সময় অনুপস্থিত। কেএমসি পদ্ধতিতে মায়ের শরীরের উষ্ণতা এবং নবজাতকের ত্বকের সংস্পর্শ নবজাতকের তাপমাত্রা ধরে রাখে, সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় এবং বুকের দুধ গ্রহণে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
তিনি বলেন, আমাদের গবেষণা হোক এমন কিছু নিয়ে— যা সহজ, কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। কেএমসি তার বড় উদাহরণ। তাই জীবন রক্ষায় প্রযুক্তির বিকল্প হিসেবেই মায়ের ঘনিষ্ঠতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
তিনি বলেন, একটি নবজাতকের জীবন রক্ষা শুধু চিকিৎসাবিদ্যার বিষয় নয়, এটি সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্বও। চিকিৎসক, নার্স, গবেষক, সাংবাদিক— সবাইকে এই বিষয়ে সংবেদনশীল হতে হবে।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দে ও অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া র্যালিতে নবজাতক বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট, স্বাস্থ্যকর্মী, আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
বক্তারা আরও বলেন, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার পদ্ধতি চিকিৎসা খাতে একটি মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এতে রোগী-ভিত্তিক যত্নের পরিবর্তে পরিবার-ভিত্তিক যত্নে জোর দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মায়ের সঙ্গে শিশুর ত্বকের সংস্পর্শ যেমন উন্নত নিউরোডেভেলপমেন্ট নিশ্চিত করে, তেমনি মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আয়োজকরা জানান, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার ধারণাটি এসেছে প্রকৃতি থেকেই। ক্যাঙ্গারু যেভাবে তার অপরিণত বাচ্চাকে বুকের থলে জড়িয়ে উষ্ণতা ও নিরাপত্তা দেয়, ঠিক সেভাবেই এই পদ্ধতিতে নবজাতককে মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে তার তাপমাত্রা ও খাদ্য নিশ্চিত করা হয়। এটি একদিকে যেমন ব্যয়বিহীন, তেমনি প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসা ব্যবস্থার বাইরে এক মানবিক বিকল্প।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0