আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা: যুক্তরাজ্যের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি এবং গৃহহীনতা বিষয়ক মন্ত্রী রুশনারা আলী শেষ পর্যন্ত তার মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। পূর্ব লন্ডনের একটি ব্যক্তিগত সম্পত্তির ভাড়া রাতারাতি ৭০০ পাউন্ড বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ভাড়াটিয়াদের সরিয়ে সম্পত্তি নতুন ভাড়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এই পদত্যাগের পেছনে রয়েছে একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ঘিরে উঠা তীব্র বিতর্ক।
‘দ্য আই পেপার’-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমেই পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এতে বলা হয়, রুশনারা আলী পূর্ব লন্ডনের একটি বাড়ির চারজন ভাড়াটিয়াকে তাদের লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার চার মাস আগেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেন। এরপর সেই সম্পত্তি আবার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় পূর্বের তুলনায় মাসে ৭০০ পাউন্ড বেশি।
এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানান টোরি পার্টির চেয়ারম্যান কেভিন হলিনরেইক। তিনি বলেন, “এটা অবিশ্বাস্য ভণ্ডামি,” এবং বিশেষভাবে উল্লেখ করেন রুশনারা আলীর মন্ত্রীর পদমর্যাদার কথা।
তবে রুশনারা আলীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এমপি রুশনারা সব সময় আইন অনুযায়ী কাজ করেছেন এবং যথাযথ আইনি বাধ্যবাধকতা মেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই দাবিই তিনি তার পদত্যাগপত্রেও তুলে ধরেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এটি রুশনারা আলীর প্রথম বিতর্ক নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সমালোচনার মুখে তাকে ‘বিল্ডিং সেফটি’ সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। ঐ পরিবারগুলো অভিযোগ করেছিল, তিনি এমন কিছু নির্মাণসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন, যেগুলো গ্রেনফেল ট্র্যাজেডি তদন্তে সমালোচিত হয়েছিল।
এছাড়া তার রাজনৈতিক জীবনে দীর্ঘদিন ধরেই হুমকি ও শত্রুতার ঘটনা লেগেই ছিল, যার মধ্যে ছিল মৃত্যুর হুমকি এবং স্টকিংয়ের অভিজ্ঞতা। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট না দেওয়ায় তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমে যায়, যা তাকে আরও চাপের মুখে ফেলে।
প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারকে দেওয়া পদত্যাগপত্রে রুশনারা আলী লেখেন, “ভারাক্রান্ত হৃদয়ে” তিনি পদত্যাগ করছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমি সব আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছি এবং আমার দায়িত্ব গুরুত্বসহকারে পালন করেছি।” তবে তিনি মনে করেন, তার পদে থাকা বর্তমান সরকারের “উচ্চাভিলাষী কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারে।”
পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্টারমার তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রুশনারা আলীর “যত্নবান কাজ” বিশেষ করে ‘ভ্যাগ্রান্সি অ্যাক্ট’ বাতিল করার ক্ষেত্রে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি রুশনারা আলী পেছন থেকে সরকারে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন এবং বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের জনগণের সেবা করে যাবেন।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে আরেক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও সরকারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে রুশনারা আলীর পদত্যাগ ব্রিটিশ রাজনীতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের উচ্চ পর্যায়ের পদত্যাগের ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করল। এটি আবারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাড়তি নজরদারির বিষয়টি সামনে এনেছে।
বাংলাফ্লো/সিএস
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0