বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করল ইসরায়েল মন্ত্রিসভার

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গাজা দখলের প্রস্তুতি নেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে গাজার সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: ইসরায়েল গাজার আরও কিছু এলাকা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার (৮ আগস্ট) ভোরে গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টা পরই দেশটির রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এ সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গাজা দখলের প্রস্তুতি নেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে গাজার সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকার উত্তরের শহর গাজা সিটি ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নগরী।

একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে অ্যাক্সিওসের সাংবাদিক বারাক রাভিদ জানিয়েছেন, নতুন পরিকল্পনায় গাজা সিটি থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে স্থলভিত্তিক সামরিক অভিযান চালানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এর আগের দিন, বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল গাজা পুরোপুরি দখলে নেবে।” তবে গাজাকে শাসন করার কোনো ইচ্ছা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমরা নিরাপত্তা বেষ্টনী চাই, তবে সেখানে সরকার হিসেবে থাকতে চাই না।”

নেতানিয়াহু আরও বলেন, ভবিষ্যতে এই অঞ্চল কোনো আরব বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে, যদিও তা কে নেবে বা কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

এই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর নেতানিয়াহু সীমিত পরিসরের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে গাজার আরও কিছু অংশ দখলের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভা বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে না বলে জানিয়েছে দুটি সরকারি সূত্র।

ইসরায়েলের সামরিক প্রধান ইয়াল জামির এই পরিকল্পনা নিয়ে আগে আপত্তি জানিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের বিশ্বাস, বিকল্প যেকোনো পরিকল্পনা হামাসকে পরাজিত করতে এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হবে।

প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে গাজার এমন এলাকাগুলো দখলের কথা বলা হয়েছে, যেগুলোর এখনো সেনা নিয়ন্ত্রণে আসা হয়নি। কিছু এলাকাতে বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময়ও দেওয়া হতে পারে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০০৫ সালের সেই সিদ্ধান্ত উল্টে যাবে, যেখানে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও নাগরিক প্রত্যাহার করেছিল। যদিও সে সময়ও সীমান্ত, আকাশপথ ও বিদ্যুৎ-পানির সরবরাহ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।

ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, গাজা ছাড়ার সেই সিদ্ধান্তের ফলেই ২০০৬ সালে হামাস নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে।

তবে নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে স্পষ্ট নয়—ইসরায়েল স্থায়ীভাবে গাজা দখলের পরিকল্পনা করছে, নাকি এটি একটি সাময়িক সামরিক অভিযান হবে।

ইসরায়েল বরাবরই বলছে, তারা হামাসকে ধ্বংস এবং জিম্মিদের মুক্ত করতেই এই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে “আলোচনার বিপরীতে একপ্রকার অভ্যুত্থান” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, “নেতানিয়াহু আগ্রাসন বাড়িয়ে তোলার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি জিম্মিদের উৎসর্গ করতে চান।”

বাংলাফ্লো/সিএস


Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0