আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা: ইউক্রেন ইস্যুতে গত কিছুদিন যাবত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর নিজের বিরক্তি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারই রেশ ধরে মস্কোর বিরুদ্ধে শতভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি এবং কিয়েভের জন্য নতুন দফা অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন।
ট্রাম্প সম্ভবত আশা করেছিলেন, এসব কারণে রাশিয়ার যুদ্ধ তহবিলের দৈন্য দশা সৃষ্টি হলে তাদের বশে আনা যাবে। তবে এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রুশ শেয়ার বাজারে দেখা গেল উল্টো চিত্র। সেখানে শেয়ারের দাম বরং ২ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষকদের ধারণা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা চাপ সামলানোর কারণে যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে ক্রেমলিন।
কঠোর মার্কিন পদক্ষেপের বিষয়ে রুশ ট্যাবলয়েড মস্কোভস্কি কমসোমোলেতস সোমবার (১৪ জুলাই) সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে নতুন দফায় দ্বৈরথ দেখা দিতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের আকস্মিক সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না।
বাস্তবিকই, বাড়তি শুল্কের বোঝা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের কাছে নতুন অস্ত্রের সরবরাহ মস্কোর জন্য সুখকর কিছু নয়। তবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য পুতিনকে ৫০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে নতুন পরিকল্পনা তৈরির সুযোগ করে দিলেন ট্রাম্প।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের ওপর নিজের বিরক্তি চেপে রাখার কোনও চেষ্টাই করেননি ট্রাম্প। ন্যাটো প্রধানের সঙ্গে আলাপকালে তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ক্লিনটন, বুশ, ওবামা, বাইডেন সবাইকে বোকা বানিয়েছেন পুতিন। আমি আশা করেছিলাম, আরও দুমাস আগেই যুদ্ধবিরতি হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে ট্রাম্প । ক্রেমলিন তাদের সে প্রচেষ্টায় দৃশ্যমান কোনও আপত্তি না জানালেও, ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’ করে সময়ক্ষেপণের পথ ধরেছে।
যেমন, গত মার্চে ট্রাম্প যখন সার্বিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিলেন, তাতে স্বাগত জানালো ক্রেমলিন। তবে শর্ত জুড়ে দিলো, কিয়েভের জন্য পশ্চিমাদের সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করতে হবে।
তাদের ওপর কোনও অভিযোগ উত্থাপনের চেষ্টা হলেই রাশিয়া দাবি করে, মস্কোও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে লড়াই বেঁধে যাওয়ার মূল সমস্যা সমাধান না করে তারা কোনও আলোচনায় আগ্রহী নয়।
তাদের দাবি, কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের জোট ন্যাটো রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠাই হচ্ছে এই সংকটের মূল কারণ।
পুতিনের দিক থেকে এভাবে বারবার সময়ক্ষেপণের কৌশলে ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছেন ট্রাম্প। সেজন্যই চাপ তৈরি করে মস্কোকে আলোচনার টেবিলে বসাতে মরিয়া ওয়াশিংটন।
তবে রুশ প্রেসিডেন্টের দিকে কোনও তাড়া দেখা যাচ্ছে না। তাদের বিশ্বাস, যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনারাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তারা যুদ্ধের অবসান চাইলেও তা হতে হবে নিজেদের শর্ত মোতাবেক।
সে সব শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো পশ্চিমাদের তরফ থেকে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণায় আপাতত সে দাবি বাস্তবে পরিণত হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছিলেন, পুতিন (দিনে) মিষ্টি কথা বলেন আর সন্ধ্যা নামতেই সবাইকে বোমা মারেন!
তবে সুসম্পর্কের মতো তিক্ততাও একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়। রুশ প্রেসিডেন্টও ট্রাম্পের প্রতি ইদানীং খুব একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব পোষণ করছেন না। সে বিষয়ে মস্কোবস্কো কোমসমোলেতসে লেখা হয়, (ট্রাম্প) নিজের মাহাত্ম্য নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। আর তিনি বেশিই বাজে বকেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
বাংলাফ্লো/এফএ
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0