বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনে প্রতিনিধি পাঠাবে ভারত

ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দিল্লি থেকে প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: মিয়ানমারে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুললেও জান্তা সরকারের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকে জানানো হয়, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দিল্লি থেকে প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

রবিবার চীনে আয়োজিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশন বা এসসিও) পার্শ্ব বৈঠকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। কোনও সম্মেলনে মূল আলোচনার বাইরে দুই বা বহু পক্ষের নিজ উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠককে বলা হয় পার্শ্ব বৈঠক।

ওই বৈঠকের বিষয়ে সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে বলা হয়, দুদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের বিষয়ে মত বিনিময় করেছেন মোদি ও মিন অং হ্লাইং। এছাড়া, বাণিজ্য উন্নয়ন, বন্ধুত্ব ও সহায়তার আওতা বৃদ্ধি নিয়েও তারা আলোচনা করেছেন।

এদিকে, ভোট জালিয়াতির অজুহাতে বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার জান্তা। এরপর থেকেই বিশ্বমঞ্চে অনেকটা একঘরে হয়ে পড়েছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী।

এছাড়া, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত আছে সেনাবাহিনী। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে কতটুকু সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব এবং জান্তা সরকারই বা কতটা আন্তরিক, এই নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ। তাই, প্রতিবেশী ও বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র ভারতের সমর্থন জান্তা সরকারকে কিছুটা আশ্বস্ত করতে পারে।

রবিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সব পক্ষের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু একটি সাধারণ নির্বাচন মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মোদি।

মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের আগের দিন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মিন অং হ্লাইং। গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের দাবি, আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বেইজিংয়ের সহায়তার বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

দেশজুড়ে তিন শতাধিক প্রশাসনিক এলাকায় ধাপে ধাপে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে জান্তা সরকার। ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে এক তৃতীয়াংশ এলাকায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের আংশিক পরিকল্পনা দেওয়া হলেও, পুরো সময়সূচি নিয়ে রয়েছে অনেক ধোঁয়াশা। যেমন, দেশের যেসব এলাকা এখন বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে, সেখানে কীভাবে ভোটগ্রহণ আয়োজিত হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও রূপরেখা সরকারের তরফ থেকে এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া, দেশে চলমান সংঘাতের কারণে ভোটার তালিকাও সঠিকভাবে করতে পারেনি সরকার। জানা গেছে, ৩৩০টি প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে মাত্র ১৪৫টির সম্পূর্ণ ভোটার তালিকা সম্পন্ন করতে পেরেছে সরকার।

এদিকে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক প্রমাণ করার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিপত্তি। জান্তাবিরোধী মনোভাবের রাজনৈতিক দলগুলোকে হয় নির্বাচনি তালিকা থেকে সরকারই বাদ দিয়েছে বা অনেক দল নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছে। জান্তা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন পাওয়ার পর, এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে নয়টি এবং প্রাদেশিক পর্যায়ে ৫৫টি দল নির্বাচনের জন্য নিবন্ধন করেছে।

সরকারের বিরোধী, পশ্চিমা সরকার, মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্লেষকদের ধারণা, ক্ষমতা আরও সুসংহত করতে নির্বাচনের নাটক করছে জান্তা সরকার। সেনা কর্মকর্তারা মূলত প্রহসনের নির্বাচন করে পুতুল সরকার দিয়ে পর্দার আড়াল থেকে সব নিয়ন্ত্রণের পাঁয়তারা করছে।

বাংলাফ্লো/এসও

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0