বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: প্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ কে আইন হিসেবে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
আদালত বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইন হিসেবে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি না করা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ কে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত আইন হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এটিকে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন হিসেবে গণ্য করা হবে এবং ওই নীতিমালাকে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
বুলিংয়ের ঘটনায় মইনুল এহসান মাহির নামে এক ব্যক্তির বদলির আদেশ বহাল রেখে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ১২১ পৃষ্ঠার রায়ের অনুলিপি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।
রায়ে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি ১৭ দফা নির্দেশনা
১. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৪ মোতাবেক ৩-৫ সদস্যবিশিষ্ট বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
২. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৪.২ মোতাবেক শিক্ষা বছরের শুরুতে এবং পরবর্তী সময়ে ৩ মাস অন্তর অন্তর শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সভা/মতবিনিময় সভা/সেমিনার/সিম্পোজিয়াম/ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে হবে।
৩. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৪.৪ মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি সবার নজরে আসে এমন উন্মুক্ত স্থানে অভিযোগ বক্স রাখার ব্যবস্থা করবে এবং প্রত্যেক দিন শেষে অভিযোগ বক্স খুলে যদি সেখানে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তা দ্রুত পরদিনই প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে উপস্থাপন করবে।
৪. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৪.৪ মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব জায়গায় বুলিং ও র্যাগিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেসব জায়গায় কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করবে।
৫. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.৩ মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (আবাসিক হলসহ) কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে বুলিং ও র্যাগিংয়ের ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করবে।
৬. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.৪ মোতাবেক বুলিং ও র্যাগিংয়ের উদাহরণ এবং পরিণতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইট এবং প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণা চালাবে।
৭. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.৫ মোতাবেক প্রত্যেক শিক্ষা বছরের শুরুতে একদিন বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ দিবস পালন করে বুলিং ও র্যাগিংয়ের কুফল সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবে।
৮. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.৬ মোতাবেক বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী/শিক্ষক/অভিভাবকরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বুলিং ও র্যাগিং করবে না, কাউকে বুলিং ও র্যাগিংয়ের শিকার হতে দেখলে রিপোর্ট করবে, প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সম্পাদন করবে এবং তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিসে ভবিষ্যতের প্রয়োজনে সংরক্ষণ করতে হবে।
৯. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.৭ মোতাবেক বুলিং ও র্যাগিংয়ের কুফল সম্পর্কিত সিনেমা, কার্টুন, টিভি সিরিজের প্রদর্শন, অনলাইনে দায়িত্বশীল আচরণের ব্যাপারে অনলাইন আচরণ (Online Behavior) সম্পর্কিত কর্মশালা ইত্যাদিসহ সহপাঠ্যক্রমিক কর্মশালা আয়োজনের নিমিত্ত কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং গৃহীত কর্মশালা বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে।
১০. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.৮ মোতাবেক কর্তৃপক্ষ বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করবে। যেমন, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান মেলা, গণিত অলিম্পিয়াড, বই পড়ার প্রতিযোগিতা, দাবা খেলা, কেরাম খেলা ও বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহমর্মিতা এবং সহানুভূতিশীলতার শিক্ষা দিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিযুক্ত করতে হবে।
১১. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.৯ মোতাবেক বুলিং/র্যাগিং এর কুফল কিংবা এর ফলে কীভাবে একজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য এবং সেই সঙ্গে বুলিং ও র্যাগিং সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান তারা নিজেরাই বের করতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য শিক্ষকরা রোল প্লে মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন।
১২. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.১০ মোতাবেক সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট কোনো শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। তাদের ‘কাউন্সিলর’ হিসেবে অভিহিত করা হবে।
১৩. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.১১ মোতাবেক বুলিং ও র্যাগিং নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
১৪. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৫.১২ মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বুলিং ও র্যাগিং বিষয়ে পরিবীক্ষণ করবেন এবং নীতিমালা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
১৫. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৬.১ মোতাবেক বুলিং ও র্যাগিংয়ে কোনো শিক্ষক, অশিক্ষক অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন/বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারী আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার প্রতিবেদন প্রতি ৩ মাস অন্তর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করতে হবে।
১৬. আইন হিসেবে ঘোষিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৬.২ মোতাবেক বুলিং ও র্যাগিংয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ/গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটি/এডহক কমিটি/বিশেষ কমিটির কোনো সভাপতি/সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৫০৩, ৫০৪ ও ৫০৯ ধারায় আইনানুযায়ী মোকদ্দমা দাখিল করতে হবে।
১৭. উপরিউল্লিখিত নির্দেশনা ১ থেকে নির্দেশনা ১৬ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিপালন করছে কিনা তা সম্পর্কে প্রতিবেদন সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতি ৩ মাস অন্তর হলফনামা সহকারে অত্র বিভাগের সংশ্লিষ্ট এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে দাখিল করবেন।
বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিল এবং নিষ্পত্তির পদ্ধতি
১. বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ ই-মেইল অথবা লিখিতভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের বরাবর দাখিল করতে হবে।
২. বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ ই-মেইল অথবা লিখিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রাপ্ত হওয়ার ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ওই অভিযোগ প্রতিষ্ঠান প্রধান অনুচ্ছেদ ৪ এর আওতায় গঠিত কমিটির কাছে পাঠাবেন।
৩. বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে প্রাপ্ত হওয়া সর্বোচ্চ ০৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে অনুচ্ছেদ ৪ এর আওতায় গঠিত বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটি তা তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে দাখিল করবে।
৪. অনুচ্ছেদ-৪ এর আওতায় গঠিত বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটি থেকে প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে প্রাপ্তির ০৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে দণ্ডবিধি ৩৫৪, ৫০৩, ৫০৪ ও ৫০৯ ধারায় আইন অনুযায়ী মোকদ্দমা দাখিল করতে হবে।
৫. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি উপরিউল্লিখিতভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করবে।
হাইকোর্টের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
১. সুশিক্ষিত, সৎ, দক্ষ এবং সচ্চরিত্রবান নাগরিক গঠন করতে হলে এর কারিগর তথা মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যেন কোনোভাবেই অসৎ, দুশ্চরিত্র, দুর্ব্যবহারকারী এবং মানসিকভাবে অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ না পান। কারণ মানসিকভাবে অসুস্থ, অসৎ, দুশ্চরিত্র, দুর্ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা যদি শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পান, তাহলে তাদের সংস্পর্শে আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। এ বিষয়ে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে উপরিউল্লিখিত বিষয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিয়োগ করলে অবশ্যই আমরা আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ কে যুগোপযোগী এবং কার্যকর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ২১ জন খ্যাতনামা, সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি প্রণয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হলো। ওই কমিটির মেয়াদ থাকবে ০৩ বছর। কমিটির অন্যতম কাজ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ কে বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের সমপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উন্নত দেশসমূহের নীতিমালা এবং আইন পর্যালোচনা করে আমাদের আইনটিকে প্রতি বছর হালনাগাদ করা।
৩. প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ০৩ মাস অন্তর অন্তর বাধ্যতামূলকভাবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হলো।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ কে দ্রুত পূর্ণ আইনের মর্যাদা দেওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হলো।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, চরিত্র মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। একটি সুন্দর চরিত্র একজন মানুষকে সমাজে সম্মানিত করে তোলে এবং জীবনে সাফল্য এনে দেয়। চরিত্র মানুষের নৈতিক এবং মানবিক গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ, যা তাকে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করে। একটি সুন্দর চরিত্র মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহিত করে এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সৎ, ন্যায়পরায়ন এবং দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিত হতে সাহায্য করে। অর্থ, যশ, খ্যাতি এগুলো সবই ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু সুন্দর চরিত্র একটি মানুষের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। সুন্দর চরিত্র গঠনের জন্য প্রয়োজন অধ্যাবসায়, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক মূল্যবোধের অনুশীলন। পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি শিশুর মধ্যে এইসব গুণাবলী তৈরি করা সম্ভব। সুতরাং চরিত্রকে অবহেলা না করে, একে লালন করা উচিত। এটি মানুষের জীবনের অমূল্য সম্পদ, যা তাকে সুখী ও সফল করে তোলে। সংক্ষেপে, মানুষের জীবনে চরিত্র একটি মূল্যবান সম্পদ যা তাকে সমাজে সম্মানিত করে তোলে, জীবনে সাফল্য এনে দেয় এবং আত্ম-সন্তুষ্টি প্রদান করে।
সুন্দর চরিত্র গঠনে প্রাথমিকভাবে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এরপর প্রয়োজনীয় শিক্ষাদানের মাধ্যমে সুন্দর চরিত্র গঠনে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব ধর্মের উপসনালয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে সুশিক্ষিত এবং সুন্দর চরিত্র গঠনে আমাদের পরিবারসমূহ যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমনিভাবে ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব ধর্মের উপসনালয়ও। কারণ আমাদের পরিবারগুলো, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব ধর্মের উপসনালয় যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারতো, তাহলে আজকের সমাজে এত ভয়াবহ, কুৎসিত, অশিক্ষিত এবং দুশ্চরিত্রবান মানুষের উপস্থিতি এতটা প্রকট হতো না।
বাংলাফ্লো/এফএ
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0