জেলা প্রতিনিধি,
কুমিল্লা: কুমিল্লার লালমাইয়ে ডিভোর্সের পরও ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাক্তন স্ত্রীকে রাতযাপনে বাধ্য করতেন দুলাল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবক। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বর্তমান স্বামী ও বাবা-মাকে নিয়ে প্রাক্তন স্বামী দুলালকে হত্যা করেন ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া নামের এক নারী। পরে লাশ ফেলে রাখেন রেললাইনের পাশে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—নিহতের প্রাক্তন স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া (১৯), সিনথিয়ার বর্তমান স্বামী আবুল হাসেম (৩৪), সিনথিয়ার বাবা মো. ফারুক (৪৫), মা মরিয়ম (৩৭), স্বামীর বন্ধু মো. মফিজুল ইসলাম (৪৫), তাজুল ইসলাম (৪২) ও রুবেল আহাম্মেদ (৩৯)।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে লাকসাম রেলওয়ে পুলিশ। নিহত অজ্ঞাতনামা যুবকের মাথার ডান পাশে রক্তাক্ত জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে ময়নাতদন্তে যুবকের পরিচয় শনাক্ত হয়।
দুলাল হোসেন কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামের জব্বর মালের ছেলে। এ ঘটনায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার দেবীদ্বার ও লাকসাম এবং ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১১-এর অধিনায়ক আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আসামি ফাতেমা আক্তার সিনথিয়ার সঙ্গে প্রায় ছয় মাস আগে নিহত দুলালের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাঁরা নিমসার বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে দুলাল সিনথিয়াকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। এরই মধ্যে দুবাইপ্রবাসী আবুল হাসেমের সঙ্গে ইমোতে পরিচয় হয় সিনথিয়ার। পরিচয়ের একপর্যায়ে দুলালকে ডিভোর্স দিয়ে মায়ের বাড়িতে চলে যান সিনথিয়া।
দুই মাস আগে প্রবাসী আবুল হাসেম দেশে এলে সিনথিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু দুলাল এই ডিভোর্স না মেনে প্রায় সময় হাসেমের অনুপস্থিতিতে জোরপূর্বক বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে সিনথিয়ার বাসায় গিয়ে রাতযাপন করতেন। সিনথিয়া প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখলেও পরে বাধ্য হয়ে বর্তমান স্বামী হাসেমকে জানান। এরপর সিনথিয়া, তাঁর বর্তমান স্বামী হাসেম, সিনথিয়ার বাবা-মা মিলে দুলালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, দুলাল সিনথিয়ার বাসায় গেলে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাঁকে খাওয়ানো হয়। এরপর দুলালের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত এবং শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে আসামি রুবেলের গাড়িতে করে দুলালের মরদেহ লালমাই রেললাইনের পাশে ফেলে আসা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান র্যাব-১১-এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0