আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: দক্ষিণ ফ্রান্সে একটি বিশাল দাবানলে এখন পর্যন্ত একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে এবং অন্তত নয়জন আহত হয়েছেন। দাবানলে ইতিমধ্যে ১১ হাজার হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে। বুধবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই খবর। ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় ‘অড’ অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটি। প্রায় আট দশকে প্রথমবারের মতো এত বড় পরিসরে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে—যা আকারে প্যারিস শহরের থেকেও বিশাল। দাবানলের তীব্রতা ও বিস্তৃতি একে ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম বড় পরিবেশগত সংকটে পরিণত করেছে।

ইতোমধ্যে আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে অন্তত ২৫টি বসতবাড়ি। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাঁ লরঁ দ্য লা ক্যাবরিস নামের একটি গ্রামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, যা পারপিনিয়াঁ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বনাঞ্চল থেকে গ্রামে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে। অনেক সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু বলেন, এটি এক নজিরবিহীন দুর্যোগ। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার হেক্টরের বেশি এলাকা আগুনে পুড়ে গেছে—যা আগের কয়েক বছরে ফ্রান্সজুড়ে পোড়া এলাকার সমান বলেও জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো বলেন, ১৯৪৯ সালের পর দেশটিতে এত বড় একক দাবানল আর দেখা যায়নি।

ডাচ পর্যটক রেনাতে কুট বলেন, এক মুহূর্ত আগেও আমাদের সন্তানদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। হঠাৎ আগুন চোখে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গেই গাড়িতে লাফ দিয়ে পালাতে হয়েছে—কোনও কিছু সঙ্গে নেওয়ারও সুযোগ পাইনি। অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেছি।

স্প্যানিশ পর্যটক ইসা মেদিনা বলেন, এটা যেন বিশ্বাসই করা যাচ্ছে না—চারপাশে ধ্বংসস্তূপ।

প্রায় ২,০০০ দমকলকর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ২,৫০০ পরিবার বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। আগুন ঘণ্টায় প্রায় ৫.৫ কিলোমিটার গতিতে ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র এরিক ব্রোকার্দি।

এদিকে প্রচণ্ড গরম ও দিক পরিবর্তনশীল বাতাস পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মে অতিরিক্ত গরম ও শুষ্কতা দাবানলের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঝুঁকি এখন বসন্ত ও শরৎকালেও ছড়িয়ে পড়ছে—ফ্রান্সের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলেও এর প্রভাব পড়ছে।

ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও দাবানলের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে। স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় তারিফা এলাকায় একটি ক্যাম্পসাইটে ক্যারাভানে আগুন ধরে গেলে তা দ্রুত দাবানলে রূপ নেয়। ঘণ্টায় ৫০ কিমি বেগে প্রবাহমান বাতাস ও তীব্র গরমের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও তা পুনরায় জ্বলে ওঠে বলে জানান আন্দালুসিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও সান্স।

পর্তুগালেও দাবানল ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৪২ হাজার হেক্টরের বেশি এলাকা আগুনে পুড়েছে—যা গত বছরের তুলনায় আট গুণ বেশি। এর অর্ধেকই পুড়েছে গত দুই সপ্তাহে।

বাংলাফ্লো/সিএস