বাংলাফ্লো বিনোদন
ঢাকা: আজ ১ মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এ দিনটি শুধু একটি দিন নয়, বরং ঘামে ভেজা প্রতিটি পরিশ্রমী মানুষের আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের প্রতীক। সমাজের প্রতিটি ইট-কাঠ-পাথরের পেছনে যাদের নিষ্ঠা, তাদের কথা কেবল আন্দোলনের পতাকাতেই নয়, চলচ্চিত্রের আলোছায়াতেও অক্ষয় হয়ে আছে।
শ্রমিকের জীবনসংগ্রাম, স্বপ্ন ও প্রতিবাদ বারবার উঠে এসেছে রুপালি পর্দায়। আজকের এই দিনে ফিরে দেখা যাক এমন কিছু শক্তিশালী সিনেমা, যেখানে গল্প নয়, উঠে এসেছে জীবনের অনুপম সত্য।
১. গ্র্যাপস অব র্যাথ (১৯৪০)
জন ফোর্ড পরিচালিত এই হলিউড ক্লাসিকে ফুটে উঠেছে ১৯৩০-এর দশকের অর্থনৈতিক মন্দায় বাস্তুচ্যুত হওয়া কৃষক পরিবারের সংগ্রাম।
জন স্টেইনবেকের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমায় ওকলাহোমার জোড পরিবার জীবিকার খোঁজে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমায়। তাদের যাত্রার প্রতিটি ধাপে দেখা যায় শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সমাজের নির্মমতা। অভিনয়: হেনরি ফোন্ডা, জেন ডারওয়েল, জন ক্যারাডাইন।
২. মেইড ইন বাংলাদেশ (২০১৯)
রুবাইয়াত হোসেনের পরিচালনায় নির্মিত এই বাংলা চলচ্চিত্রে গার্মেন্ট শ্রমিক নারীদের সংগঠিত হওয়ার সাহসিকতার গল্প উঠে এসেছে। একজন নারী শ্রমিক তার সহকর্মীদের নিয়ে ইউনিয়ন গঠনের লড়াইয়ে নামেন, যেখানে সামাজিক বাধা, শোষণ আর প্রতিষ্ঠানিক নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। অভিনয়: রিকিতা নন্দিনী শিমু, নভেরা রহমান, শতাব্দী ওয়াদুদ।
৩. ছায়াবৃক্ষ (২০২৪)
নিরব হোসেন ও অপু বিশ্বাস অভিনীত এই চলচ্চিত্রে চা-শ্রমিকদের জীবনধারা, সংস্কৃতি ও বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চা-বাগানে কাজ করা শ্রমিকদের দৈনন্দিন সংগ্রাম, অধিকারহীনতা এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি হৃদয়স্পর্শী গল্প উপস্থাপন করেছেন পরিচালক বন্ধন বিশ্বাস। এই সিনেমা শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি গড়ে তুলতে এক অনন্য প্রয়াস।
৪. দ্য ল্যান্ড (১৯৭০)
মিসরীয় পরিচালক ইউসেফ চেহিনের এই চলচ্চিত্রে দেখা যায় ১৯৩০ সালের মিশরের একটি গ্রামের কৃষকদের সংগ্রাম। জমিদার শ্রেণির দখল ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকদের ঐক্য, দ্বন্দ্ব ও প্রতিরোধের গল্প এই সিনেমাকে করেছে ঐতিহাসিক। অভিনয়: মুহাম্মদ এল মেলিগাই, ইয়াহিয়া চেহিন, ইজ্জত এল আলাইলি।
৫. মডার্ন টাইমস (১৯৩৬)
চার্লি চ্যাপলিনের পরিচালনা ও অভিনয়ে নির্মিত এই চিরন্তন সিনেমায় শিল্পায়নের যুগে শ্রমিকের যান্ত্রিক জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
একজন কারখানা শ্রমিকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, চ্যাপলিন সমাজের অমানবিকতা ও পুঁজিবাদী নিপীড়নকে হাস্যরসের আড়ালে তুলে ধরেছেন। অভিনয়: চার্লি চ্যাপলিন, পলেট গডার্ড।
৬. হাউ গ্রিন ওয়াজ মাই ভ্যালি (১৯৪১)
কয়লাখনিতে কাজ করা একটি শ্রমিক পরিবারের জীবন নিয়ে নির্মিত জন ফোর্ডের আরেক মাস্টারপিস।
ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রিচার্ড লিওয়েলিনের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এ চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে শ্রমিকদের মজুরি সংকট, দুর্ঘটনা ও মালিক শ্রেণির উদাসীনতা।
অভিনয়: ওয়াল্টার পিজিয়ন, মৌরিন ও’হারা। পুরস্কার: অস্কারে ১০টি মনোনয়ন, জিতেছে ৫টি।
৭. ইকিরু (১৯৫২)
আকিরা কুরোসাওয়া পরিচালিত এই জাপানি সিনেমায় একজন সরকারি কর্মচারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জীবনের অর্থ খুঁজে বের করার প্রয়াসে একটি পার্ক নির্মাণে আত্মনিয়োগ করেন। এই চলচ্চিত্র মানুষের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা, সামাজিক অব্যবস্থা ও আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক নিঃসঙ্গ মানুষের প্রতিবাদের চিত্র। অভিনয়: তাকাশি শিমুরা।
এই চলচ্চিত্রগুলো শুধু বিনোদন নয়, শ্রমিক শ্রেণির জীবনের আখ্যান। যাঁরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, কাদায় গড়িয়ে সমাজের কাঠামো দাঁড় করান—তাঁদের কথা বলা, তাঁদের অনুভব করা আমাদের দায়িত্ব।
রুপালি পর্দায় তাঁদের সংগ্রামের গল্প দেখে আমাদের হৃদয়ে যদি একটু সহানুভূতি জাগে, তবেই হয়তো শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য কিছুটা হলেও পূর্ণ হয়।
বাংলাফ্লো/আফি
Comments 0