Logo

ভূমিকম্প: ৩ বছরের শিশুসহ মিয়ানমারে ১৪৪, থাইল্যান্ডে ৩ জন নিহত

মান্দালয়ের বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী দাউ কি শোইন বলেন, আমার তিন বছর বয়সী মেয়ে নিহত হয়েছে। আমরা তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই ভূমিকম্প শুরু হয়।

শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে অন্তত ১৪৪ জন নিহত হয়েছে। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

বাংলা ফ্লো ডেস্ক

ঢাকা: ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিন বছরের এক শিশুসহ অন্তত ১৪৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া থাইল্যান্ডেও ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরের দিকে মিয়ানমারে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে।

এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ৭৩২ জন আহত খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন ৩০ তলা একটি ভবন ধসে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এখনও ওই ভবনে ৪৩ জন শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এসব তথ্য জানিয়েছে।

মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এই তথ্য জানিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মিন অং হ্লাইং জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে নেপিদোতে ৯৬ জন, সাইগাইংয়ে ১৮ জন এবং মান্দালয়ে ৩০ জন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে নেপিদোতে ১৩২ জন এবং ৩০০ জন সাগাইংয়ে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকা থেকে এখনো আহতদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরের দিকে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে বলে জানায় মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস।

সংস্থাটি জানায়, স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় শহর মান্দালয়ের কাছে ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রায় ১১ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প–পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়। প্রতিবেশী বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও ভিয়েতনামেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।

মিয়ানমারের সাংবাদিকদের পরিচালিত থাইল্যান্ড-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সময় মান্ডালা, নেপিডো ও অন্যান্য এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়ে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং শহরের কাছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূঅভ্যন্তরের ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) গভীরে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি। প্রথমবার আঘাত হানার কিছু সময় পর আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।

ইউএসজিএস আরও জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মাটির প্রায় ছয় মাইল গভীরে। কম গভীরতায় হওয়ায় কম্পন ভয়াবহভাবে অনুভূত হয়েছে। এরই মধ্যে বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অসংখ্য আহত মানুষ।

মান্দালয়ের বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী দাউ কি শোইন বলেন, আমার তিন বছর বয়সী মেয়ে নিহত হয়েছে। আমরা তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই ভূমিকম্প শুরু হয়।

দাউ কি শোইন নিজেও আহত হয়েছেন। হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন তখনও তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।

মান্দালয়ের এই নারী বলেন, ‘ভূমিকম্প শুরু হলে আমরা তাড়াহুড়ো করে নিচতলায় নামার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার মেয়ে ভেতরে আটকা পড়ে। তাকে আনতে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করি। তখনই আমার ওপর ইট পড়ে।‘

মান্দালয় জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কিয়াও জিন বলেন, এখানে অন্তত ২০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ২০০ জন।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রয়াত্ত সংবাদমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ব্রিটিশ আমলে তৈরি সাগাইং সেতু ভেঙে গেছে। এটি মিয়ানমারের মান্দালয় ও সাগাইং অঞ্চলে ইরাবতী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছিল।

ভূমিকম্প আঘাত হানার পর মান্দালয় এবং রাজধানী নেপিদোসহ দেশটির মধ্যঞ্চলের কয়েকটি অংশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে জান্তা সরকার। এ ছাড়া সাগাইং, মান্দালয়, বাগো এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলের পাশাপাশি পূর্ব শান রাজ্যেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মিয়ানমারে ভূমিকম্পের তীব্রতায় রাস্তাঘাট ফাটল দেখা গেছে এবং ভবনের টুকরো খসে পড়েছে।

এ দিকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পায়োংতার্ন সিনাওয়াত্রা তাৎক্ষণিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যাংকককে জরুরি অঞ্চল ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং দেশব্যাপী প্রদেশগুলোকে পরিস্থিতিকে জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে জনগণকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়।

বাংলাফ্লো/এসবি

Leave a Comment

Comments 0