আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা: দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল নেপালে দেখা দিয়েছে নতুন সংকট। বিক্ষোভ-সহিংসতার জেরে ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
এমনকি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে তারা অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেলকে ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের জেরে তিনি সম্প্রতি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
শনিবার দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল, মাওবাদী কেন্দ্রসহ আটটি দল অভিযোগ করেছে, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক। এর আগে গত শুক্রবার নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির পরামর্শে আইনসভা ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। মূলত এটি ছিল বিক্ষোভকারীদেরও প্রধান দাবি।
এর আগে গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন নিহত হন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়।
মূলত নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হলেও ততক্ষণে বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গত মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ জনতা কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট ভবন ও সরকারি দপ্তরে আগুন ধরিয়ে দেয়, বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি।
এমন অবস্থায় শনিবারের বিবৃতিতে আট দল পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানায়। তাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ নেপালের আদালতের রায়ের দৃষ্টান্তেরও পরিপন্থি।
তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া ছিল তথাকথিত “জেন জি” আন্দোলনের অন্যতম দাবি। ইতোমধ্যেই আগামী ৫ মার্চ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আট দলের মতে, এসব দাবি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত।
এদিকে শনিবার প্রেসিডেন্ট পাউডেল সব পক্ষকে সংযম দেখাতে এবং নির্বাচনের আয়োজন সফল করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “অত্যন্ত কঠিন ও ভীতিকর পরিস্থিতিতেও শান্তিপূর্ণ সমাধান এগিয়ে আসছে। সংবিধান টিকে আছে, সংসদীয় ব্যবস্থা টিকে আছে এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রও টিকে আছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আরও কার্যকর গণতন্ত্রের পথে এগোনোর সুযোগ আছে।”
নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কি শনিবার কাঠমান্ডুতে শপথ নেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির অধিকারী কার্কির নেতৃত্বকে “জেন জি” আন্দোলনের নেতারাও সমর্থন জানাচ্ছেন।
তবে তার সরকারকে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে— আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভাঙচুর হওয়া পার্লামেন্ট ও সরকারি ভবনগুলো পুনর্নির্মাণ, পরিবর্তনের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামা তরুণদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্র নিয়ে শঙ্কিত নাগরিকদের আশ্বস্ত করা। পাশাপাশি সহিংসতার দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করাও হবে অন্যতম দায়িত্ব।
বিবিসি বলছে, গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার পর নেপাল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। কার্কি শপথ নেওয়ার পর সেনারা কাঠমান্ডুর রাস্তায় টহল শেষ করে ব্যারাকে ফিরে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্ত থেকেই এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা এর বাইরে রাজনৈতিক এলিটদের দুর্নীতি ও দায়হীনতার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া “নেপো কিড” প্রচারণা রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবনধারা ও দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছিল। সোমবার রাতে তড়িঘড়ি করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও আন্দোলন তখন অপ্রতিরোধ্য রূপ নেয়।
বাংলাফ্লো/এফএ
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0