Logo

মেটার নতুন এআই ‘লামা-৪’ কি বিশ্ব কাঁপাবে?

মেটার প্রধান পণ্য কর্মকর্তা ক্রিস কক্স বলেন, লামা ৪ মডেল মেটার এআই এজেন্টগুলোকে আরও বুদ্ধিমান ও কার্যকর করে তুলবে। এসব এজেন্ট শুধু যুক্তি বিশ্লেষণের পাশাপাশি ওয়েব ব্রাউজিংসহ বিভিন্ন জটিল কাজও করতে পারবে। এর ফলে ভোক্তা ও ব্যবসা বিভিন্ন সমস্যার কার্যকর সমাধান পাবে।

মেটা আনছে লামা-৪

বাংলা ফ্লো ডেস্ক

ঢাকা: বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সের দুনিয়ায় বাজার কাঁপাচ্ছে চ্যাট জিপিটি এবং জেমিনি। এমন অবস্থায় মার্ক জুকারবার্গ বা তার প্রতিষ্ঠান মেটা কিভাবে পিছিয়ে থাকে। আর তাই এবার এই দুই সংস্থাকে টেক্কা দিতেই হাজির মার্ক জুকারবার্গ।

মার্ক জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান মেটা এবার নতুন উদ্যমে মাঠে নামছে জেনারেটিভ এআই দুনিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। ইতোমধ্যেই ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্রধান মার্ক জুকারবার্গ একটি বড় ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেছেন, মেটার নির্মিত এআই লামার অধীনে দুইটি নতুন মডেল উন্মোচন করা হয়েছে। এই মডেলগুলো হলো- লামা ৪ স্কাউট এবং লামা ৪ ম্যাভেরিক। আগামীতে আনা হবে আরও দুইটি মডেল।

মেটা জানিয়েছে, লামা ৪ স্কাউট ও লামা ৪ মাভেরিক মডেল দুটি এখন পর্যন্ত তাঁদের সবচেয়ে উন্নত এআই মডেল এবং প্রচলিত জনপ্রিয় লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেলগুলোর (এলএলএম) সমকক্ষ। এই দুইটিই ডাউনলোড করে এখনই ব্যবহার করা যাবে। নতুন এআই মডেলগুলো টেক্সট, ছবি, অডিও এবং ভিডিও প্রসেসও তৈরি করতে পারবে।

তবে এগুলোর চেয়ে আরও উন্নত সংস্করণ লামা ৪ বেহেমথ এখনো পরীক্ষা–নিরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে মেটা।

গত মার্চে মেটার প্রধান পণ্য কর্মকর্তা ক্রিস কক্স বলেন, লামা ৪ মডেল মেটার এআই এজেন্টগুলোকে আরও বুদ্ধিমান ও কার্যকর করে তুলবে। এসব এজেন্ট শুধু যুক্তি বিশ্লেষণের পাশাপাশি ওয়েব ব্রাউজিংসহ বিভিন্ন জটিল কাজও করতে পারবে। এর ফলে ভোক্তা ও ব্যবসা বিভিন্ন সমস্যার কার্যকর সমাধান পাবে।

লামা ৪-এ যা রয়েছে

লামা ৪-এর মধ্যে দুটি প্রধান মডেল রয়েছে। লামা ৪ স্কাউট একটি ছোট ও দক্ষ মডেল, যা একটিমাত্র এনভিডিয়া এইচ ১০০ জিপিইউতে চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। দীর্ঘ ডকুমেন্ট বা কথোপকথন প্রসেস করার জন্য মডেলটির প্রচুর ধারণক্ষমতা রয়েছে।

স্কাউট-এর ১০ মিলিয়ন টোকেন কনটেক্সট উইন্ডো রয়েছে এবং এটি ১৭ বিলিয়ন প্যারামিটার-বিশিষ্ট একটি মডেল, যাতে ১৬টি এক্সপার্ট (মডেলের ভেতরের সাব নেটওয়ার্ক) রয়েছে, যা মডেলটিকে আরও দক্ষভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। স্কাউট মডেলটি লামা ৩-এর তুলনায় দ্বিগুণ শক্তিশালী, যেটির প্যারামিটারের সংখ্যা ছিল ৮ বিলিয়ন। সাধারণভাবে, একটি মডেলের প্যারামিটার যত বেশি, ততই তা ভালো ফলাফল দ্রুত দিতে পারে।

অন্যদিকে, লামা ৪ মারভিক আরও জটিল মডেল। মডেলটি একটিমাত্র এনভিডিয়া এইচ ১০০ ডিজিএক্স সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে। মেটা দাবি করছে, কিছু কাজের ক্ষেত্রে জিপিটি-৪ ও জেমিনি ২.০-এর মতো নেতৃস্থানীয় এআই সিস্টেমের সঙ্গে কার্যকরী হলেও এই মডেল কম কম্পিউটিং রিসোর্স ব্যবহার করে। এটি একটি মাঝারি আকারের মডেল, যা ১৭ বিলিয়ন প্যারামিটার এবং ১২৮ এক্সপার্ট নিয়ে তৈরি।

স্কাউটের একটি খুব বড় ‘কনটেক্সট উইন্ডো’ রয়েছ। সেটি হলো ১০ মিলিয়ন টোকেন। (‘টোকেন’ হলো টেক্সটের অংশ যেমন—শব্দ, চিহ্ন ইত্যাদি)। স্কাউট শুধু টেক্সট নয়, ছবিও প্রক্রিয়া করতে পারে। অর্থাৎ, স্কাউট এমন একটি এআই মডেল, যা ছবি বিশ্লেষণ এবং এর মধ্যে থাকা তথ্য বুঝতে পারে। ছবির সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারে, যেমন—একটি ছবির বর্ণনা দেওয়া বা ছবি সর্ম্পকিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। স্কাউটে ছবি গ্রহণ করতে পারে এবং কয়েক মিলিয়ন শব্দ ধারণও করতে পারে, যার মাধ্যমে এটি অত্যন্ত দীর্ঘ ডকুমেন্ট প্রক্রিয়াকরণ করে।

এ ছাড়া, মডেলগুলো মাল্টিমোডাল, অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের ডেটার সঙ্গে কাজ করতে পারে। যেমন—একটি ছবি বিশ্লেষণ করা, ভিডিও সারাংশ তৈরি করা অথবা একটি অডিও ক্লিপের ব্যাপারে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। মেটা দাবি করছে, এই মডেলগুলো আগের সংস্করণগুলো তুলনায় যুক্তি দিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে ও কোডিং তৈরিতে উন্নত।

লামা ৪-এর নতুন সংস্করণে আরেকটি শক্তিশালী মডেল যুক্ত হয়েছে, যার নাম লামা ৪ বেহিমথ। মেটা দাবি করছে, এটি তাদের তৈরি করা সবচেয়ে শক্তিশালী এআই মডেল এবং বর্তমান সবচেয়ে বুদ্ধিমান মডেলগুলোর মধ্যে একটি। বেহিমথ মূলত একটি ‘শিক্ষক’ মডেল হিসেবে কাজ করে, যা নতুন এআই মডেলগুলোর প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হয়। উল্লেখ্য, ‘ডিস্টিলেশন’ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বেহিমথ মডেলটি দিয়ে লামা ৪ স্কাউট ও লামা ৪ মাভেরিক মডেল দুটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এভাবে, বেহিমথ মডেলটি অন্যান্য মডেলের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও দক্ষ এবং এটি অন্যান্য এআই মডেলের উন্নয়ন ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

যেভাবে ব্যবহার করা যাবে মডেলগুলো

এই প্রযুক্তি মেটার বিভিন্ন অ্যাপ যেমন: হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রামের এআই ফিচার উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এসব প্ল্যাটফর্মে আরও উন্নত চ্যাটবট বা মিডিয়া ইন্টারপ্রিটেশন টুলস (ছবি বা ভিডিও বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার টুলস) তৈরি করা যাবে। ডেভেলপাররা এবং ব্যবসায়ীরা এই মডেলগুলো তাদের সফটওয়্যারে কাস্টমার সাপোর্ট, কনটেন্ট মডারেশন বা ডেটা বিশ্লেষণের মতো কাজে ব্যবহার করতে পারবে।

অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় মেটা লামা ৪ স্কাউট ও লামা ৪ মারভিক মডেল দুটিকে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার হিসেবে প্রকাশ করেছে। ফলে, কেউ চাইলে এই মডেল দুটিকে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন কাজের উপযোগী করে কাস্টমাইজ করে।

ব্যবহারকারীরা এখনই মেটার ওয়েবসাইট বা হাগিং ফেসের মতো তৃতীয় পক্ষের প্ল্যাটফর্মে মডেলগুলো পরীক্ষা করে দেখবে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এবং দ্য ইনফরমেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লামা ৪ নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে উন্মোচিত হলো। এ বছর এআই অবকাঠামোতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে মেটা।

তবে এটি এখনো স্পষ্ট নয়, এই মডেলগুলো কীভাবে দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

আগামী ২৯ এপ্রিল মেটা তাদের প্রথম ‘লামাকন এআই’ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে, এ বছরই মেটা একটি স্বতন্ত্র এআই চ্যাটবট অ্যাপও উন্মোচন করতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নভেম্বরে ওপেনএআই বাজারে নিয়ে আসে জেনারেটিভ (জেন) এআই প্রযুক্তির চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। এরপর থেকেই হু হু করে বাড়তে থাকে এআই প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে জেন এআই-ভিত্তিক বিভিন্ন টুল ও ফিচারে রীতিমতো সয়লাব হয়ে যায় প্রযুক্তি বাজার। উত্তরোত্তর বিনিয়োগও বৃদ্ধি পেতে থাকে এ খাতে। মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজনের মতো শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে এআই খাতে। ফলে এআই’র বাজারে বর্তমানে চ্যাটজিপিটির সমকক্ষ বা তাঁর চেয়েও শক্তিশালী এআই চ্যাটবট ও মডেল রয়েছে।

মার্ক জাকারবার্গের সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটা নিজেও এআই খাতে বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করেছে। তাঁদের ওপেন সোর্স এআই মডেল লামা ইতোমধ্যেই বহুল-ব্যবহৃত মডেলগুলোর একটি। বিশেষ করে ওপেন সোর্স হওয়ার কারণে অনেকেই লামা মডেলটিকে কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করছে। উল্লেখ্য, মেটার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে লামা-ভিত্তিক এআই অ্যাসিসট্যান্ট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

মেটা এ বছর এআই অবকাঠামোর উন্নয়নে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা করেছে বছরের শুরুতেই। যদিও এআই খাতে বড় অংকের অর্থায়নের বিপরীতে মুনাফা অর্জন এখনও আশানুরূপ নয় কোনো প্রতিষ্ঠানেরই। ফলে বিনিয়োগকারীদের চাপ রয়েছে মেটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। কিন্তু তা স্বত্বেও, অচিরেই এআই খাতে বিনিয়োগ হ্রাস, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাফ্লো/এসবি

Related Posts টেকনোলজি

Leave a Comment

Comments 0