টেকনোলজি ডেস্ক
ঢাকা: চিকিৎসকরা বলছেন, তিনজনের ডিএনএ ব্যবহার করে জন্ম নেওয়া শিশুরা বংশগত দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্ত। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে তিনজনের জেনেটিক উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে আটটি শিশু জন্ম নিয়েছে।
আর সেখানেই পাওয়া গেছে এমন প্রমাণ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাজ্যে আটটি শিশু জন্ম নিয়েছে এমন এক বিশেষ পদ্ধতিতে, যেখানে তিনজনের জেনেটিক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদ্ধতির লক্ষ্য ছিল মারাত্মক ও সাধারণত মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠা মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ প্রতিরোধ করা। চিকিৎসকদের মতে, এই শিশুদের জন্মের মধ্য দিয়ে প্রমাণ মিলেছে প্রযুক্তিটি কার্যকর।
এই পদ্ধতিতে একজন মা ও বাবার ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর সঙ্গে আরেক নারীর একটি সুস্থ ডিম্বাণুর অংশ ব্যবহার করা হয়। মূলত মায়ের দেহ থেকে আসা ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া দিয়ে।
বিবিসি বলছে, যুক্তরাজ্যে এই চিকিৎসা পদ্ধতি ১০ বছর আগে আইনগত স্বীকৃতি পেলেও এবারই প্রথম দেখা গেল এর সফল প্রয়োগে সুস্থ শিশু জন্ম নিচ্ছে। এই রোগ মায়ের মাধ্যমে সন্তানের দেহে চলে যায়, যা শরীরের শক্তি উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে শিশুর দেহে নানা জটিলতা দেখা দেয় এবং এতে করে হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কে ক্ষতি হয়, অন্ধত্ব, খিঁচুনি, পেশি দুর্বলতা এমনকি অঙ্গ বিকলও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা জন্মের কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যায়।
যেসব দম্পতির পরিবারে এর আগেও এ ধরনের রোগ দেখা গেছে বা মায়ের শরীরে এমন ত্রুটি রয়েছে, তারা ঝুঁকিতে থাকেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুর প্রায় সব জেনেটিক উপাদান আসে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে, তবে মাত্র ০.১ শতাংশ ডিএনএ আসে তৃতীয় নারীর কাছ থেকে। এই সামান্য পরিবর্তনও বংশপরম্পরায় চালিত হয়।
যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া পরিবারগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছে, তবে তারা কিছু অনুভূতি প্রকাশ করেছে। একজন কন্যাশিশুর মা বলেন, “অনিশ্চয়তার এত বছর পর এই চিকিৎসাই আমাদের আশার আলো দেখায়, আর এখন আমরা আমাদের মেয়েকে কোলে পেয়েছি। ওকে প্রাণভরে বড় হতে দেখে আমরা কৃতজ্ঞতায় অভিভূত।”
এক পুত্রসন্তানের মা বলেন, “এই যুগান্তকারী চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য আমরা একটি পূর্ণ পরিবার পেয়েছি। মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগের যন্ত্রণা যেন দূর হয়ে গিয়ে এখন শুধু আশার আলো, আনন্দ আর কৃতজ্ঞতা।”
মাইটোকন্ড্রিয়া হলো কোষের ভেতরের ক্ষুদ্র গঠন, যা অক্সিজেন ব্যবহার করে খাবার থেকে শরীরের জ্বালানির মতো শক্তি তৈরি করে। এই মাইটোকন্ড্রিয়া কেবল মায়ের দিক থেকেই সন্তানের শরীরে আসে। তাই মায়ের ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া বদলে অন্য এক নারীর সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি ও স্থানীয় হাসপাতালগুলোর গবেষণায় এক দশক আগে এ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে। এরপর ২০১৭ সালে এনএইচএস-এ একটি বিশেষায়িত ইউনিট চালু হয়।
এই পদ্ধতিতে প্রথমে মা ও ডোনার দু’জন নারীর ডিম্বাণু এবং বাবার শুক্রাণু ল্যাবরেটরিতে নিষিক্ত করা হয়। তারপর দুইটি ভ্রূণের প্রো-নিউক্লিয়াস (ডিএনএ ধারণকারী গঠন) থেকে বাবা-মায়ের ডিএনএ একত্রিত করে সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া-যুক্ত ভ্রূণে স্থাপন করা হয়। ফলে শিশুটি জেনেটিকভাবে মা-বাবার সন্তান হলেও মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ থেকে মুক্ত থাকে।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাফ্লো/আফি
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0