বাংলাফ্লো প্রতিবেদক
ঢাকা: ভাসানচরকে হাতিয়া উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করার ‘ষড়যন্ত্র চলছে’ উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন হাতিয়ার সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের অনুমোদনক্রমে ২০১৬-১৭ সালের দিয়ারা জরিপে ভাসানচরকে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে হাতিয়া দ্বীপ সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনের আগে প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. জাহেদুল আলম।
তিনি বলেন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে ২০১৬-১৭ সালের দিয়ারা জরিপে নবসৃষ্ট ভাসানচর অংশটি সঠিকভাবে হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক ২০১৬-১৭ সালে নবসৃষ্ট ভাসানচর অংশটির (ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা ও কেউয়ার চর) দিয়ারা জরিপ সম্পন্ন করা হয়। উক্ত জরিপের রেকর্ড ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত গেজেটে ভাসানচর অংশের ৬টি মৌজা নোয়াখালী জেলাধীন হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে জনৈক সন্দ্বীপবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আইনভিত্তিক সমাধানের জন্য রুল জারি করেন। পরে সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ভাসানচরকে হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট নোটিশ জারি হয়েছে। ভাসানচর অংশের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বর্ণিত ছয়টি মৌজা নিয়ে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের অধীন ভাসানচর থানা মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গঠিত হয়, যা ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন পর দুরভিসন্ধিমূলকভাবে চলতি বছরের মার্চের ২৩ তারিখে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস চট্টগ্রাম, নোয়াখালী (হাতিয়া) ও চট্টগ্রাম (সন্দ্বীপ) অংশের সীমানা নির্ধারণবিষয়ক প্রতিবেদন পাঠায় এবং একই তারিখে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (রাজস্ব শাখা) আন্তজেলা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির নিমিত্তে গঠিত কমিটির প্রথম সভার কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আদেশ জারি করে, যা সুস্পষ্ট প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি।
জাহেদুল আলম বলেন, সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়, চট্টগ্রামের ২৩ মার্চ ২০২৫ তারিখের ১৩০(২) নম্বর স্মারকের প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ত্রুটিপূর্ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট। ১৯২৯ সালের সঠিক সিএস ম্যাপ, ১৯৫৪ সালের নোয়াখালী জেলা থেকে সন্দ্বীপ থানা পৃথকীকরণ আদেশ ও এর সুস্পষ্ট ভৌগোলিক বিভাজন, ২০১৬-১৭ সালের ভাসানচরের দিয়ারা জরিপ ও ম্যাপ এবং হাতিয়া ও সন্দ্বীপ উপজেলার সর্বশেষ ম্যাপ পর্যালোচনা না করে শুধু অনুমাননির্ভর বিকৃত সিএস ম্যাপ ও গুগল ম্যাপের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন দাখিল করায় আমরা হাতিয়াবাসী হতাশ ও সংক্ষুব্ধ। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভাসানচরকে হাতিয়া উপজেলার অনুকূলে দিয়ারা জরিপ সম্পাদন করে চূড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশ ও হাতিয়া উপজেলাধীন চরঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাসানচর থানা গঠন শান্তিপূর্ণ ও বিরোধ ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। একটি কুচক্রী মহল অত্র অঞ্চলের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অপপ্রয়াসে ভাসানচরকে একটি ইস্যু হিসেবে সামনে এনেছে, যা অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন যতন, হাতিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ মো. মাহফুজুল হক, যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. কারিমুল হাই নাঈম, হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সাবেক সভাপতি মো. হেদায়েত হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, নোয়াখালী জেলার শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি শাহ মিজানুল হক মামুনসহ হাতিয়ার সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0