চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে ঢাকা থেকে আসা এক আইনজীবীর শুনানির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ওই আইনজীবী বলছেন, আদালতে আইনজীবীদের বাধায় তার আবেদনের শুনানি করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামিরপক্ষে ওই আইনজীবীর কোনো ওকালতনামা না থাকায় তা খারিজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ ও আইনজীবী সমিতির নেতারা।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে শুনানি করতে তিনটি আবেদন জমা দেন আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ।চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, “আসামির পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবীর কোনো ওকালতনামা নেই। যে মামলায় উনি পিটিশন দিয়েছেন, সেই মামলার উকিল শুভাশীষ শর্মার পক্ষে উনার লিখিত কোনো ওকালতনামা নেই। তাই আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।” আবেদনকারী আইনজীবী বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমি তিনটি আবেদন জমা দিয়েছিলাম। একটি হলো যে মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই মামলায় তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে শুনানি করার আবেদন। “দ্বিতীয়টি হলো, ২৬ নভেম্বর করা মিস মামলার নথি উপস্থাপনের জন্য এবং তৃতীয় আবেদনটি ছিল চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনার জন্য।” রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “চিন্ময় প্রভুকে এখানকার আইনজীবীরা কেউ রিপ্রেজেন্ট করতে পারছেন না। জজ সাহেব আমার আবেদন অ্যালাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেসময় ১০০ জনের মত আইনজীবী একসাথে চিৎকার করতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, ‘উনি পারবেন না, উনি এখানে কেন আসছেন, উনার ওকালতানামা নেই’। “আমি একজন সিনিয়র আইনজীবী। আমি নিজে স্বাক্ষর করে শুনানি করার আবেদন করেছি। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি এমন, তা বুঝতে পারিনি। এটা খুব দুঃখজনক পরিস্থিতি। পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন বলে আমি রক্ষা পেয়েছি।” ওকালতনামা না থাকার বিষয়ে রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে যে আইনজীবীরা ছিলেন তারা মামলার আসামি। আমি এসে দেখলাম পরিস্থিতি কী, তারা কিভাবে এখানে আসবেন? যেহেতু এখানে আবেদনের শুনানি হয়নি, আমরা উচ্চ আদালতে যাব।” এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ঢাকা থেকে একজন অ্যাডভোকেট এসেছিলেন। আসামির পক্ষে ওকালতনামা বা আাসমির উকিলের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অনুমতি না থাকায় আদালত ওই আইনজীবীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।” শুনানি শেষে আইনজীবীদের একাংশ আদালত ভবনের ভেতর মিছিল করতে থাকেন। তারা ‘ইসকনের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। আদালতের পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “একজন আইনজীবী এসেছিলেন, উনার করা আবেদন খারিজ করা হয়েছে। এগুলো আদালতের আইনগত বিষয়। কোন মিছিল-স্লোগান আমরা দেখিনি।” চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে আইনজীবীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও সমিতির সদস্যদেরকে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি থেকে বিরত থাকতে বলার কথা স্বীকার করেছে। গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময়ের জামিন শুনানিতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ার পর আগামী ২ জানুয়ারি ফের শুনানির দিন ঠিক হয়েছে। এর মধ্যে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেই শুনানির আগের দিনই সনাতনী জাগরণ জোট অভিযোগ করে, ৭০ জন আইনজীবীর নামে মামলা করা হয়েছে যেন তারা চিন্ময়ের পক্ষে আদালতে হাজির হতে না পারে। কয়েকজন আইনজীবীর চেম্বারে হামলার অভিযোগও আনা হয়। এর আগে ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম। ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।