স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: ক্রিকেটে ইংলিশ দর্শকরা বেশ রুচিশীল, টেস্টের সকালে মিঠে রোদ গায়ে মাখিয়ে খেলা দেখা যেন তাদের ঐতিহ্য হয়ে গেছে। প্রতিপক্ষের কোনো বোলারের ভালো বোলিং কিংবা ব্যাটসম্যানের ভালো শটে হাততালি দিতে এতটুকু কার্পণ্য নেই তাদের। টেস্ট দর্শনেও তাদের একটা প্রথাগত ব্যাপার রয়েছে। সাধারণত রক্ষণাত্মক ক্রিকেট দেখতেই তারা অভ্যস্ত। সেখানেই কিনা প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়েছেন ইংল্যান্ডের কিউই কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম।
টেস্টেও প্রতি ওভারে ৪.৫ বা ৫ রান নিতে হবে, প্রতিপক্ষ বোলারের ওপর চড়াও হয়ে তাদের মনোবল ভেঙে দিতে হবে, রানের পাহাড়ে চাপা দিয়ে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে দিতে হবে– অধিনায়ক বেন স্টোকসকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাককুলামের এই টেস্ট তত্ত্বকেই ইংলিশ মিডিয়া ‘বাজবল’ নামে পরিচিতি দিয়েছে। এই আগ্রাসী টেস্ট ব্যাটিং দিয়ে গত তিন বছরে বেশ কিছু সফলতা পেয়েছে ইংল্যান্ড। কিন্তু কোথাও গিয়ে আটকেও যাচ্ছে, তারা আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে কখনো ফাইনাল খেলতে পারেনি, বাজবলের আক্রমণ দিয়ে জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া আর ভারতের মতো দলের বিপক্ষে কোনো টেস্ট সিরিজ। তাহলে কি লাভ এই বাজবল দিয়ে?
মাইকেল ভন টেলিগ্রাফে লেখা কলামে প্রশ্নটি রেখেছেন। নাসির হোসেনের মতো সাবেক অধিনায়ক ফক্স স্পোর্টসের ক্যামেরার সামনে বাজবলের ক্ষতিকারক দিক বোঝাতে গিয়ে ওভাল টেস্টের উদাহরণটাই টেনেছেন; যেখানে ভারতের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ৩০০ রান তুলে নেওয়ার পর ৩৬৭ রানে গিয়ে অলআউট ইংল্যান্ড!
২০২২ সালের মে মাসে ম্যাককুলামকে প্রধান কোচ করে এবং বেন স্টোকসকে টেস্টের অধিনায়ক করে ‘বাজবল’ যুগ শুরু করার অনুমতি দেয় ইংল্যান্ড। তারা দুজনই ভয়ডরহীন ক্রিকেটের মানসিকতা চালু করে এই ফরম্যাটে। তারা ড্রতে নয়, হারজিতে বিশ্বাসী। এ কারণেই চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করতে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। তবে তারা দু-দুটি আইসিসি চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে (২০২১-২৩, ২০২৩-২৫) পঞ্চম স্থানে থেকেছে।
পরিসংখ্যান বলছে ম্যাককুলামের বাজবল তত্ত্ব দিয়ে এ পর্যন্ত ৪১ টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড। যার মধ্যে জয় ২৫টি, হার ১৪টি আর ড্র মাত্র দুটি। মজার ব্যাপার হচ্ছে এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশিত সফলতা পায়নি বাজবল। এই দুটি দলের বিপক্ষে ১৬ টেস্টের মধ্যে জয় ছয়টিতে, হার আটটিতে আর ড্র হয়েছে দুটি। সেখানে অন্যান্য দলের বিপক্ষে বাজবল দিয়ে রীতিমতো দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। অন্য দলগুলোর বিপক্ষে ২৫ টেস্টে ম্যাককুলাম-স্টোকসের ইংল্যান্ড জয় পেয়েছে ১৯টি, হার মাত্র ছয়টি। এসব দলের বিপক্ষে ড্র হতে দেয়নি ইংল্যান্ড।
ঠিক এখানেই বাজবল তত্ত্বের ‘এক ফসলি’ প্রভাব স্পষ্ট হয়ে পড়ছে। শুধুই মারকাটারি ব্যাটিংয়ের কারণে টেস্ট ক্রিকেটের গভীরতা ক্ষয়ে যাচ্ছে। রবিচন্দ্র অশ্বিন কিছুদিন আগে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে বাজবলের ক্ষতিকারক দিকগুলো ব্যাখ্যা করেছিলেন। ‘বাজবল আসলে ম্যাককুলামের নিজ দেশের খেলার ধরন, যা কিনা পিচ এবং কন্ডিশনকে ইংল্যান্ডে এনে প্রয়োগ করার একটা চেষ্টা। কিন্তু নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের খেলার কন্ডিশনের মধ্যে পার্থক্য আছে। ইংল্যান্ডে সিম আর সুইং খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাফ্লো/এসও
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0