বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রেমের টানে ধর্ম পাল্টিয়ে দিনাজপুরে চীনা নাগরিক

এক বছর আগে একটি অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইলে গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে কথোপকথন থেকে শুরু হওয়া তাদের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে ভালোবাসায় পরিণত হয়।

ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধি

দিনাজপুর: দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কাজীপাড়া শিমুলতলী এলাকায় বাংলাদেশি তরুণী সুরভী আক্তারের সঙ্গে ভালোবাসার টানে এসেছেন চীনের জিয়াংশু সিটির বাসিন্দা ইয়ং সাও সাও (৩৬)। এক বছর আগে একটি অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইলে গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে কথোপকথন থেকে শুরু হওয়া তাদের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে ভালোবাসায় পরিণত হয়। সেই ভালোবাসার ফলে ইয়ং সাও সাও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুরভীকে বিয়ে করেছেন।

দম্পতি বর্তমানে দিনাজপুরে একসঙ্গে বসবাস করছেন। সুরভী আক্তার ওই এলাকার স্থানীয় নুর হোসেন বাবুর বড় মেয়ে। আর ইয়ং সাও সাও মারা যাওয়া ইয়াং শি ও লিও ট্যাংহু দম্পতির সন্তান।

চার আগস্ট বাংলাদেশে এসে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর সুরভী আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ইয়ং সাও সাও। ৯ আগস্ট সুরভী স্বামীর সঙ্গে নিজ বাড়িতে আসেন।

স্থানীয়রা চীনা জামাইকে দেখার জন্য বাড়ির আশপাশে জমায়েত হয়েছেন। মোবাইলের গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে ইয়ং সাও সাও গ্রামের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সবাই তার উপস্থিতিতে আনন্দ ও উৎসাহ প্রকাশ করছেন, কেউ কেউ সেলফি তুলছেন। চীনা জামাই ও বাংলাদেশি নারীর মুখে খুশির ঝলক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তাদের প্রতি আপ্যায়ন ও স্নেহ কম নেই।

সুরভী আক্তার বলেন,

হ্যালো ট্যাগ নামে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় হয়। সেখানে আস্তে আস্তে আমাদের কথা চলে, পরিচয় রূপ নেয় ভালোবাসায়। আমাদের এই সম্পর্ক এক বছর ধরে। পরে সে বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি তাকে জানাই, যদি আমার ধর্ম গ্রহণ করতে পারো তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি। পরে সে বাংলাদেশে আসে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এখন আমি তাকে বিয়ে করেছি। আমার পরিবার ও এলাকাবাসী অত্যন্ত খুশি।

সুরভীর ছোট বোন রিয়া আক্তার বলেন,

আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার দুলাভাই চীনের। এটা আমার কাছে গর্ব করার মতো। কারণ আমার বোনের ভালোবাসার টানে বাংলাদেশ এসে আমার বোনকে বিয়ে করেছেন। আমি দুলাভাইয়ের সঙ্গে মোবাইলে ট্রান্সলেট করে কথা আদান-প্রদান করি। আমার পরিবারের সবাই খুশি হয়েছি।

সুরভীর বাবা নুর হোসেন বাবু বলেন,

আমার দুই মেয়ে। তারা মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকে। আমার বড় মেয়ের সঙ্গে চীনা নাগরিকের পরিচয় হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে। তারা একে অপরকে পছন্দ করেছে। বাংলাদেশে এসে চীনা জামাই আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। ৯ আগস্ট আমি তাদেরকে ঢাকার গাজীপুর থেকে দিনাজপুরে নিয়ে এসেছি।

সুরভীর আত্মীয় নাসিমা খান বলেন,

এর আগে আমরা টিভিতে দেখেছি বিদেশি ছেলে অথবা মেয়ে বাংলাদেশে প্রেমের টানে এসে বিয়ে করেছে। তখন অনেক ভালো লাগতো বিষয়গুলো। কিন্তু এটি যে আমার আত্মীয়ের সঙ্গে ঘটবে এটি কখনও ভাবিনি। সুরভী আমাদেরকে বিষয়টা জানিয়েছে, আমরা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছি।

স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম বলেন,

আমাদের এলাকায় বিদেশি জামাই। বিষয়টি অবশ্যই ভালো এবং গর্ব করার মতো। ইতিমধ্যে অনেকে আসছেন, দেখছেন, কথা বলছেন। ভালো লাগছে। আগে টিভিতে দেখেছি বিদেশে জামাই, আর এখন আমাদের এলাকায় বিদেশে জামাই।

আজম হোসেন বলেন,

বিদেশি জামাই আমাদের ভাষা বোঝে না, আমরাও তার ভাষা বুঝি না। সে মোবাইলে কথা বলাবলি (গুগল ট্রান্সলেট) করছে। তারা সুখে জীবনযাপন করুক এই দোয়া করি।

বাংলাফ্লো/সিএস

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0