জেলা প্রতিনিধি
লালমনিরহাট: স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে লালমনিরহাটের বিডিআর রোডে শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরাল ঢেকে দেওয়া হয় কাপড় দিয়ে।
মহান স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চের ওই দেয়াল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও স্থানীয় ছাত্র-জনতার দাবির মুখে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাধীনতা দিবসের আগে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ বা ‘স্থানীয় ছাত্র-জনতার’ কাছ থেকে কোনো বিক্ষোভ বা মিছিল দেখা যায়নি। এছাড়া বর্তমানে সেখানে কোনো সংস্কার কাজও চলছে না বলে তারা জানিয়েছেন। ফলে কার আপত্তির কারণে ও কেন ম্যুরালটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক)স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) টিআইবি এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মোরশেদ আলমের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের ওই উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।
সনাকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম পরিচালনায় ৬ নম্বর সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত লালমনিরহাটে ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং গতকাল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
স্থানীয়রা জানায়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১-এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী, বিজয়ে উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধারা, পতাকা হাতে হাতে বিজয়ে উচ্ছ্বসিত জনতা, ৭ বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, ২৬ মার্চ বুধবার সকালে সনাকের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে তাদের। এর পর সদস্যরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনুষ্ঠান থেকে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন তারা।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও একই রকম ঘটনা ঘটানো হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) লালমনিরহাট শাখার সহ-সভাপতি ও লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক সুপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও অবদানে আমরা এ দেশ পেয়েছি। তাদের ইতিহাস ও স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে এ অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, লালমনিরহাট শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চে স্থাপিত ম্যুরাল স্মৃতিস্মারকটি যদি চলমান সময়ের জন্য অনুপযুক্ত হয়, প্লিজ! কর্তৃপক্ষ, ম্যুরালটি ধ্বংস করে দিন, তবু সারা বছর সবার জন্য উন্মুক্ত রেখে বিশেষ বিশেষ দিনে কাপড় দিয়ে ঢেকে সার্কাস করবেন না।
সনাকের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল ইসলাম বীরপ্রতীক জানান, ওই ম্যুরালে বায়ান্ন থেকে ৭১ পর্যন্ত ধারাবাহিক ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। কাপড় দিয়ে তা ঢেকে রাখার ঘটনা তাঁকে ব্যথিত করেছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, অনেকের আপত্তির কারণে ও জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0