Logo

বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের

এই ঘোষণা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। কেননা দেশটি প্রধানত রপ্তানিনির্ভর, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য।

হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্পছবির উৎস,Bernd Debusmann Jr/BBC

বাংলা ফ্লো প্রতিবেদক

ঢাকা: বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই তালিকায় বাংলাদেশও আছে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপরে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ।

বুধবার (২ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।

কোন দেশের ওপর কত হারে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ হবে, সংবাদ সম্মেলনে তার একটি তালিকা তুলে ধরেন তিনি।

এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসছে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।

হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সরকার দাবি করেছে, বাংলাদেশ কার্যকরভাবে আমেরিকান পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। 

এর প্রতিক্রিয়ায়, এখন থেকে বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

এই ঘোষণা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। কেননা দেশটি প্রধানত রফতানিনির্ভর, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। 

ঢাকার শিল্পখাতের নেতাদের আশঙ্কা, উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

হোয়াইট হাউস জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও চীনের মতো ‘সবচেয়ে বেশি অপরাধী’ দেশগুলোর পণ্যের ওপর আরও উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্প বলেন, এটি দেশগুলোর অন্যায্য বাণিজ্যনীতির বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মুক্ত বাণিজ্যনীতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়বে। দেশটির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়তে পারে।

হোয়াইট হাউস জানায়, ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু হবে ৫ এপ্রিল থেকে। এরচেয়েও বেশি হারে শুল্ক কার্যকর হবে ৯ এপ্রিল থেকে।

চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস সিএনবিসিকে জানায়, চীনের ওপর নতুন পাল্টা শুল্ক আগের ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হবে, যার ফলে ট্রাম্পের এই মেয়াদে বেইজিংয়ের ওপর প্রকৃত শুল্ক হার দাঁড়াবে ৫৪ শতাংশ।

আর জাপানের ওপর ২৪ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ হারে শুল্ক বসবে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক বসছে ৩৭ শতাংশ।

কিছু ছোট দেশের ওপর অনেক বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকান দেশ লেসোথোর পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, আর ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার পণ্যের ওপর যথাক্রমে ৪৬ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ শুল্ক বসবে।

হোয়াইট হাউসের একটি তথ্যপত্র অনুযায়ী, বেসলাইন (মূল মান) শুল্ক ১০০টিরও বেশি দেশে কার্যকর হবে, এর মধ্যে প্রায় ৬০টি দেশ উচ্চমাত্রার ‘পাল্টা’ শুল্কের আওতায় পড়বে।

অনেক দেশ ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে 'বাণিজ্য যুদ্ধ' হিসেবে আখ্যায়িত করছে।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে তাতে কেউ-ই জয়ী হবে না।

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণার এই দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের 'অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস' হিসাবে অভিহিত করে বলেন, \আমরা একটি স্বাধীন ও সুন্দর জাতি হতে যাচ্ছি।\

\এবং, এই দিনটিকে আপনারা ভবিষ্যতে স্মরণ করবেন। আপনারাই তখন বলবেন, 'তিনি (মি. ট্রাম্প) সঠিক ছিলেন'। এই দিনটি আমাদের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন।\

আমদানিতে ন্যূনতম১০শতাংশশুল্কারোপ

মার্কিন অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য অন্যান্য দেশের উপর 'ন্যূনতম ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক' ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা আগামী পাঁচই এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

যেসব দেশশুধুমাত্রএইবেসলাইনশুল্ক'রমুখোমুখিহবে, সেগুলোহলো:

যুক্তরাজ্য

সিঙ্গাপুর

ব্রাজিল

অস্ট্রেলিয়া

নিউজিল্যান্ড

তুরস্ক

কলম্বিয়া

আর্জেন্টিনা

এল সালভাদর

সংযুক্ত আরব আমিরাত

সৌদি আরব

এছাড়া, আগামী নয়ই এপ্রিল থেকে আরো প্রায় ৬০টি ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ শুরু হবে। এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিলো।

এদিকে, আজ থেকেই বিদেশে প্রস্তুতকৃত অটোমোবাইলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু হচ্ছে।

আর, যুক্তরাজ্যর ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশের পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণএশিয়ারদেশগুলোরকীঅবস্থা

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ, যা ইউএসটিআর নামে পরিচিত, তাতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমান ছিল আনুমানিক ১০ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশে।

আর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারের মত।

ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা), যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্য।

আর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য।

মি. ট্রাম্পের নতুন শুল্ক পরিকল্পনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।

এশিয়ার দেশগুলোরওপরআরোপিতশুল্কএকনজরেদেখেনেওয়াযাক:

চীন - ৩৪ শতাংশ

ভিয়েতনাম - ৪৬ শতাংশ

তাইওয়ান - ৩২ শতাংশ

ইন্দোনেশিয়া - ৩২ শতাংশ

জাপান - ২৪ শতাংশ

দক্ষিণ কোরিয়া - ২৫ শতাংশ

থাইল্যান্ড - ৩৬ শতাংশ

মালয়েশিয়া - ২৪ শতাংশ

কম্বোডিয়া - ৪৯ শতাংশ

বাংলাদেশ - ৩৭ শতাংশ

ভারত - ২৬ শতাংশ

পাকিস্তান - ২৯ শতাংশ

সিঙ্গাপুর - ১০ শতাংশ

নেপাল - ১০ শতাংশ

ফিলিপাইন - ১৭ শতাংশ

শ্রীলঙ্কা - ৪৪ শতাংশ

মিয়ানমার - ৪৪ শতাংশ

লাওস - ৪৮ শতাংশ

কী কারণেএইসিদ্ধান্তনিলেনট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে 'বাজেভাবে' ব্যবহার করেছে এবং আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে।

এটিকে তিনি 'প্রতারণার' সঙ্গে তুলনা করেছেন।

অন্যান্য দেশ অসম শুল্ক আরোপ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে।

তবে, মি. ট্রাম্প বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক অন্যদের আরোপিত শুল্কের 'প্রায় অর্ধেক'।

\সুতরাং, সেই হিসাবে পুরোপুরি পাল্টা শুল্ক হচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, আমি তা করতে পারতাম। কিন্তু এটি করলে অনেক দেশের জন্য কঠিন হয়ে যেত। আমি তা করতে চাইনি,\ বলেন মি. ট্রাম্প।

তিনি তার বক্তব্যে বারবার উল্লেখ করেন যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের \মুক্তির দিন\।

এই দিনটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিলো বলেও জানান।

তিনি যোগ করেন যে, আজকের দিনটি আমেরিকান শিল্পের \পুনর্জন্মের\ দিন এবং আজ আমেরিকা \পুনরায় সম্পদশালী\ হলো।

Leave a Comment

Comments 0