বিনোদন ডেস্ক
ঢাকা: নেটিজেনদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়—ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত লাস্যময়ী অভিনেত্রী পরিমনির নাকি দর্শকের মনে গেঁথে থাকার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো সিনেমা নেই। তবে কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ পরিমনি অভিনীত কিছু ভালো সিনেমা রয়েছে, যেগুলো হয়তো ততটা আলোচনায় আসেনি, যতটা আলোচনায় থেকেছেন ব্যক্তি পরিমনি।
'মহুয়া সুন্দরী' এমনই একটি সিনেমা, যেখানে পরিমনি প্রাণবন্ত অভিনয় দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিলেন। এই সিনেমার শেষ দৃশ্য দর্শকদের অনেককেই কাঁদিয়েছিলো, যেমন করে কাঁদায় সাহিত্যের ট্র্যাজেডি চরিত্রগুলো।
দ্বিজ কানাই রচিত 'মহুয়ার পালা' নামক ঐতিহ্যবাহী পালাগান অবলম্বনে এই সিনেমার কাহিনি লিখেছেন রওশন আরা নিপা। এই গুণী পরিচালকের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জননী’। নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘গোধূলির লগন’ ‘আপন আমার আপন’, ‘বিজয়িনী’, ‘অবাক জলপান’। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর শিশুদের নিয়ে ‘চিলড্রেন ইন দ্য হিডেন ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্রটিও তার নির্মিত।
মহুয়ার পালার আধুনিক রূপে তৈরি হয় এক ভিন্নমাত্রিক যাত্রাপালা, যেখানে গল্প এগোয় প্রেম, প্রতারণা ও সমাজব্যবস্থার নিষ্ঠুর বাস্তবতার মধ্য দিয়ে।
যাত্রাদলের নায়িকা ছবি রানীর প্রেমে পড়ে যান বিদেশফেরত লোকসংস্কৃতি গবেষক ও গ্রামের প্রভাবশালী মিয়ার ব্যাটা জীবন। জীবনের চোখে যাত্রা শুধুই বিনোদন নয়, বরং সমাজকে বোঝানোর এক শক্তিশালী মাধ্যম। কিন্তু সমাজের প্রভাবশালীদের কাছে যাত্রা দু-চার পয়সার খেলা, আর যাত্রাপালার নাচনেওয়ালি ভোগ্যপণ্য মাত্র।
ছবিরানীর মধ্যে একজন বড় মাপের শিল্পীকে খুঁজে পায় জীবন—যার যোগ্যতা আন্তর্জাতিক প্রশংসার দাবি রাখে। সে ছবি রানীকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু জীবনের বাবা, প্রভাবশালী মিয়া তাঁর ক্ষমতা ও অহংকারের কারণে এই সম্পর্কের বিরোধিতা করে। তিনি জীবনকে মিথ্যা বলে শহরে পাঠিয়ে দেন এবং ছবি রানীকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন।
যাত্রাদলের কান্ডারি হারেস মিয়াকে দলবল নিয়ে রাতে গোপনে গ্রাম ছাড়তে হয়। জীবন ছাড়া নতুন জায়গায় ছবি রানীর দিন কাটে যন্ত্রণায়। এক সময় সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। মহুয়া পালার শেষ দৃশ্যের প্রতিফলন ঘটে তার জীবনে। সত্যিকারের বিষলক্ষ্মার মতো সে নিজের শরীরে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করে।
পালাগানের নদের চাঁদ সিনেমার জীবন। আর জীবনের বাবা, যাত্রাদলের কান্ডারি হারেস মিয়া সহ এই প্রেমের পথের কাটা সবাই হোমরা বাইদ্যা। এই সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে পরিমনি ছবি রানীর মাঝে নিজেকে দেখতে পায়।
এই ট্র্যাজিক চরিত্রে পরিমনির আবেগঘন অভিনয় অনেক দর্শকের মনে গভীর দাগ কেটে গেছে—যা সময়ের পরতে পরতে থেকেও যায় অদৃশ্য এক আলোড়ন হয়ে।
বাংলাফ্লো/আফি
Comments 0