বাংলাফ্লো ডেস্ক
ঢাকা: বড় হতে হতে আমরা অনেক ‘সত্য’ শুনে এসেছি। বাবা-মা, দাদি-নানির মুখে শোনা সেসব উপদেশ বা সাবধানবার্তা অনেকটাই যেন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, সেগুলোর পেছনে আদৌ কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি না?
আমরা যে সব স্বাস্থ্যবিষয়ক ‘মিথ’ বিশ্বাস করে এসেছি, তার অনেকটাই আসলে ভুল ধারণা। বিষয়টি পরিষ্কার করতে আমরা কথা বলেছি ড. ইয়ান টালবার্গ-এর সঙ্গে। তিনি ইউসি হেলথ আরজেন্ট কেয়ার – সার্কেল স্কয়ার, কলোরাডো স্প্রিংস-এর পারিবারিক চিকিৎসক এবং জরুরি সেবা বিশেষজ্ঞ। চলুন দেখে নিই সেই প্রচলিত ১০টি মিথ যা আমরা শুনে বড় হয়েছি — এবং যেগুলো বিজ্ঞানের চোখে মিথ্যা:
১. চুইংগাম পেটে পাঁচ থেকে সাত বছর থেকে যায়
বাস্তবতা: চুইংগাম হজম হয় না, কিন্তু শরীর থেকে ২-৪ দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বের হয়ে যায়।
২. খাওয়ার পর এক ঘণ্টা না গেলে সাঁতার কাটা বিপদজনক
বাস্তবতা: স্বাভাবিক খাবারের পর সাঁতার কাটা একেবারে নিরাপদ। যদিও অতিরিক্ত খাওয়ার পর ক্লান্তি লাগতে পারে।
৩. আমরা আমাদের মস্তিষ্কের মাত্র ১০% ব্যবহার করি
বাস্তবতা: এই ধারণার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা মস্তিষ্কের প্রায় প্রতিটি অংশই ব্যবহার করি।
৪. টিভির সামনে বেশি বসলে চোখ নষ্ট হয়
বাস্তবতা: টিভি থেকে নির্গত বিকিরণ খুবই কম। চোখ কিছু সময়ের জন্য ক্লান্ত হতে পারে, তবে স্থায়ী ক্ষতি হয় না।
৫. শেভ করলে দাড়ি/লোম ঘন ও গাঢ় হয়ে ফিরে আসে
বাস্তবতা: নতুন গজানো চুল সূর্যের আলো না পাওয়ায় গাঢ় ও মোটা মনে হয়। কিন্তু চুলের প্রকৃত গঠন একই থাকে।
৬. চিনি খেলে বাচ্চারা হাইপার হয়ে যায়
বাস্তবতা: গবেষণায় প্রমাণিত, চিনি সরাসরি হাইপার একটিভিটির কারণ নয়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে অ্যাড্রেনালিন বেড়ে হালকা উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।
৭. ভেজা চুলে বাইরে গেলে ঠান্ডা লাগে
বাস্তবতা: ঠান্ডা হয় ভাইরাসের কারণে, ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে নয়। ঠান্ডায় অসুস্থতার মতো উপসর্গ দেখা দিলেও তা ভাইরাসবাহিত নয়।
৮. শরীরের সবচেয়ে বেশি তাপ মাথা দিয়ে বের হয়
বাস্তবতা: মাথা শরীরের ১০-১৫% অংশ, তাই সেই অনুপাতে তাপক্ষয় হয়। শরীরের বাকি অংশ থেকেও তাপ হারায়।
৯. আঙুলের গাঁট ভাঙলে বাত হয়
বাস্তবতা: দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, এটি বাতের কারণ নয়। তবে অতিরিক্ত খটখট করলে গ্রিপ শক্তি কমে যেতে পারে।
১০. ব্রেকফাস্ট দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার
বাস্তবতা: এটি তিনটি মূল খাবারের একটি মাত্র, একমাত্র নয়। তবে অনেকেই ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে যান, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আমরা অনেক সময় শুনে, দেখে কিংবা শেখা কথা বিশ্বাস করে ফেলি—প্রমাণ ছাড়া। কিন্তু আজকের এই তথ্যভিত্তিক যুগে, আমাদের উচিত সেসব বিশ্বাসকে যাচাই করা। আপনি যা শুনে বড় হয়েছেন, তা কি আদৌ সত্য? নাকি তা শুধুই প্রজন্মের ভুল ধারণা?
বাংলাফ্লো/আফি
Comments 0