বাংলাফ্লো ডেস্ক
ঢাকা: মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে পাকিস্তানের আওতাধীন কাশ্মীরসহ মোট ৯টি জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। তবে এই হামলায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে শুরু হয়েছে ধোঁয়াশা। প্রতিবেশী দুই দেশের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে যে সংখ্যা জানানো হচ্ছে তা নিয়েও শুরু হয়েছে উত্তেজনা। আসলে কতজন মারা গেছে সরকারিভাবে দুই দেশের বক্তব্যে তার কোনো পরিষ্কার সংখ্যা নিশ্চিত হওয়ার সম্ভব হয় নি বলেই দাবি বিভিন্ন গণমাধ্যমের।
হামলার পরে ভারত বলছে, ৭০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পাকিস্তানের ভাষ্য, হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
সূত্রের বরাতে বুধবার দুপুরে এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানায়, কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারত পাকিস্তান এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ৭০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদন বলছে, হামলা হওয়া ৯টি স্থানের মধ্যে আছে মুজাফফরাবাদ, কোটলি, বাহাওয়ালপুর, রাওয়ালকোট, চকস্বরী, ভিম্বার, নীলম উপত্যকা, ঝিলাম এবং চকওয়াল।
সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, এই স্থানগুলোকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের সাথে সম্পর্কিত শিবিরগুলোকে লক্ষ্য করে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে করা সংবাদে জানায়, অপারেশন সিঁদুর কেবল সামরিক প্রতিশোধের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। এটি কৌশলগত সংকল্পের একটি বিবৃতি ছিল। সন্ত্রাসবাদী-সম্পর্কিত ৯টি স্থানে ২৪টি সুনির্দিষ্টভাবে সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে যে, তারা আর সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ সহ্য করবে না, এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতাও সহ্য করবে না।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন লিখেছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৬। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরীর বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
এদিকে পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালক জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের ছয়টি জায়গায় ২৪টি স্থাপনায় বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ভারত। এই হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৪৬ জন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এর পর থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই সীমান্তে গুলি ছোড়ে দুই পক্ষ।
চলমান এই উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ভারত।
দেশটির দাবি, মধ্যরাতের পর পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে তাদের হামলা চালানোর ঘটনা পহেলগাম হামলা-সহ ‘সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের নিরবচ্ছিন্ন প্রশ্রয়ে’র জবাব দিতেই!
বুধবার (৭ মে) দেশটির রাজধানী দিল্লিতে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বুধবার সকালে এ কথা জানানো হয়।
ভারতের হয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং সেনাবাহিনীর তরফে দুজন প্রতিনিধি - স্থলবাহিনীর হয়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং, যারা দুজনেই নারী।
‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ বা পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি যতটা কম রেখে শুধুমাত্র 'সন্ত্রাসবাদী' ঘাঁটি ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। এই হামলাকে তারা ‘প্রিসিশন স্ট্রাইক’ বলে বর্ণনা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিক্রম মিশ্রি বলেন, পহেলগামের ঘটনায় ‘দ্য রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের যে সংগঠনটি দায় স্বীকার করেছে এবং লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল থেকে হামলার ছবি পোস্ট করা হয়েছে তাতে এই ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ স্পষ্ট।
তবে আক্রমণের বিষয়ে কথা বললেও ভারতের একাধিক বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে বলে পাকিস্তান যে দাবি করেছে সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি তারা।
অভিযানে ভারতের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, সেটাও কিছু বলা হয়নি।
সাংবাদিক বৈঠকে কোনও প্রশ্ন নেওয়া হবে না বলে শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয়।
লক্ষণীয় বিষয় হল, শুধু পহেলগাম হামলাই নয়, তার আগে মুম্বাইতে ২৬/১১-র হামলা থেকে শুরু করে ভারতে চালানো আরও বহু হামলায় যে সব 'সন্ত্রাসবাদী' জড়িত বলে ভারত মনে করে, তারা যেখানে প্রশিক্ষণ পেয়েছে বলে ভারতের ধারণা, তার সবগুলোই আক্রমণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করা হয়েছে।
এ দিন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ইতিমধ্যে সকাল দশটা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাসভবনে গিয়ে তাকে সার্বিক সামরিক পরিস্থিতি নিয়ে অবহিত করেছেন।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তারও বেশ খানিকক্ষণ আগেই সেখানে পৌঁছে যান।
এর আগে, দিবাগত রাতে ভারতের হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাকিস্তান। দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, কোটলি, ভাওয়ালপুর ও মুজাফ্ফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ এ হামলা চালিয়েছে ভারত।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছেন বলে পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক বিবিসিকে জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় ভারতকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যায়িত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তারা পাকিস্তানের ভেতরে পাঁচটি জায়গায় ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা চালিয়েছে। এই ঘৃণ্য আগ্রাসনমূলক পদক্ষেপ শাস্তি ছাড়া পার পাবে না।
ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা জম্মুর কিছু অংশে পাকিস্তানি বাহিনী গোলা–গুলি চালাতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
বুধবার (৭ মে) দিবাগত রাত পৌনে তিনটায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য সম্প্রচার বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘জম্মুর পুঞ্চ-রাজৌরি এলাকার ভিম্বার গলিতে কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ করে আবারও যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। ভারতের সেনাবাহিনী ধাপে ধাপে এর যথাযথ জবাব দিচ্ছে।’
ভারতীয় পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গুলিতে দুই নারী আহত হয়েছেন। তাঁদের একজনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ধুনদিয়াল সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের সদরদপ্তর গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি ও ডন
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0