নিজস্ব প্রতিবেদক: সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীকে মূল বেতনের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দিবে সরকার । কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেড অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য এক বছরে সরকারের বাড়তি খরচ হবে অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘মহার্ঘ ভাতা’ সংস্থানের বিষয় পর্যালোচনা করতে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে একটি বৈঠক করেছে। কমিটির আহ্বায়ক প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ভিত্তিতে মহার্ঘ ভাতা দিতে ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে অর্থ বিভাগ। এ ক্ষেত্রে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে এক অর্থবছরে বাড়তি প্রয়োজন হবে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে অর্থ ব্যয় কিছুটা কমাতে ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও প্রথম থেকে দশম গ্রেডের কর্মচারীদের ১০ বা ১৫ শতাংশ হারে ভাতা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম থেকে দশম গ্রেডে ১০ শতাংশ দেওয়া হলে প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হবে। আর ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে আরও একটু বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রথম থেকে দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা ২০ শতাংশ এবং ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ৩০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতার দাবি জানিয়েছেন। তবে পর্যালোচনা কমিটির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলো, মহার্ঘ ভাতা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে। সাধারণত মূল বেতনের ওপর মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয়। শুধু মূল বেতনের ওপর দেওয়া হবে নাকি মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে এর ভিত্তিতে অন্যান্য ভাতাও বাড়ানো হবে, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মহার্ঘ ভাতার ভিত্তিতে অন্যান্য ভাতা বাড়লে এ খাতে অর্থ আরও প্রয়োজন হবে। শিগগির কমিটির আরও একটি বৈঠক হবে। সেখানেই বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তথ্য অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। কোন সময় থেকে মহার্ঘ ভাতা চালু হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই এ অর্থবছরে এ বাবদ কত টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ইতোমধ্যে গত সরকারের আমলে ‘বৈষম্যের শিকার দাবি’ করা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েক দফায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া প্রশাসনের ‘পদবঞ্চিত’ ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭৫ কোটি টাকা দেওয়া সিদ্ধান্তও হয়। সব মিলিয়ে চলতি বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় বেশ বাড়বে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সূত্র আরও জানায়, মহার্ঘ ভাতার বাড়তি ব্যয়ের হিসাব করা হয়েছে চলতি বাজেটে বরাদ্দের ভিত্তিতে। তবে প্রতিবছর বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়ে। সেই হিসাবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দাঁড়াতে পারে প্রায় সাড়ে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা বাবদ যোগ হবে আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হবে প্রায় লাখ কোটি টাকা।