Logo

কাশ্মীর হামলার ঘটনায় নিয়ন্ত্রণরেখার বাসিন্দারা আতঙ্কে

পেহেলগামের ঘটনার পর এই নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাড়ের বাসিন্দারাই আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় সংঘাত বেধে যেতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: গত ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহতের পর জীবনযাপন বদলে গেছে নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাড়ের বাসিন্দাদের। প্রতিদিন তারা এখন আতঙ্কে কাটাচ্ছেন।

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চুরান্দা গ্রামের শিক্ষক ফারুক আহমেদ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, শিশুরা যথারীতি ক্লাসে আসছে। তবে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক। পেহেলগামের ঘটনার পর এই নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাড়ের বাসিন্দারাই আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় সংঘাত বেধে যেতে পারে।

এর আগেও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুটি যুদ্ধ হয়েছে। কয়েক দশক ধরে সীমান্তে সংঘর্ষ হয়েছে অসংখ্যবার। তাই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। বলা যায়,এটি তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

পেহেলগামে পর্যটক হত্যার ঘটনায় সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইসলামাবাদ বলছে, ভারত পাকিস্তানে হামলার করার অজুহাত খুঁজছে,এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ তাদের হাতে রয়েছে।

চুরান্দা গ্রাম থেকে পাকিস্তানি ও ভারতীয়,উভয় সৈন্যকেই তাদের ফাঁড়িতে দেখা যায়। এই গ্রামের প্রবীণেরা বলছেন,গত কয়েক দশক ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় গ্রামে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন।

২৫ বছর বয়সী আব্দুল আজিজ বলেন, এই গ্রামে অন্তত দেড় হাজার মানুষ রয়েছে,আর রয়েছে ছয়টি বাঙ্কার। উভয় পক্ষ পরস্পরকে হুমকি দিচ্ছে। যেকোনো সময় সীমান্তে সংঘাত শুরু হয়ে যেতে পারে। তখন আমরা কোথায় যাব? আমরা ভয়ে আছি, কারণ এই গ্রামটিই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুই মাসের খাবার মজুত

অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণরেখার অপর পাশে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের চাকোঠি গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বাড়ির কাছে পাহাড়ের ঢালে সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল তৈরি করেছে।

২২ বছর বয়সী ফয়জান আনায়াত রয়টার্সকে বলেন,এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়িতে বাঙ্কার তৈরি করছে। যখনই গোলাগুলি হয়,তখনই তারা বাঙ্কারের ভেতরে ঢুকে যায়।

ফয়জানের প্রতিবেশি মোহাম্মদ নাজির বাঙ্কার তৈরির কাজ করছিলেন। শুক্রবার জুমআর নামাজের জন্য কাজে বিরতি নেওয়ার ফাঁকে বলছিলেন, আমরা কোনো কিছুর জন্য ভয় পাই না। আমাদের প্রতিটি ছেলেমেয়ে প্রস্তুত।

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,তারা জরুরি তহবিল হিসেবে এরই মধ্যে ১০০ কোটি পাকিস্তানি রুপি মজুত করেছে। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গ্রামগুলোতে দুই মাস চলার মতো খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা জানান, সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার আশঙ্কায় এই অঞ্চলের সব মাদ্রাসা আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মূখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, (যুদ্ধ শুরুর পর) যদি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা মেরামতের জন্য সীমান্তের কাছে যন্ত্রপাতি স্থানান্তর করা হয়েছে এবং উদ্ধারকারী ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।

পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্টের কাশ্মীর শাখার প্রধান গুলজার ফাতিমা বলেন, ত্রাণকর্মীদের দল যখনই উত্তেজনা বাড়তে দেখে, তখনই তারা প্রাথমিক চিকিৎসাকর্মীসহ ত্রাণসামগ্রী ও অন্য কর্মীদের মোতায়েনের কাজ শুরু করে।

গুলজার ফাতিমা বলেন, ভারত সামরিক অভিযান শুরু করলে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থানান্তর ঘটবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। তাই অন্তত ৫০০ পরিবারের জন্য তাঁবু, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, রান্নার সামগ্রীসহ ত্রাণশিবির প্রস্তুত করছেন তাঁরা।

বাংলাফ্লো/এসএস

Leave a Comment

Comments 0