বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক শ্রমিকদের ১৮২২.৯৮ কোটি টাকা দাবি সংক্রান্ত মামলার (মামলা নম্বর ৫৭৬/২০১৮) শুনানি পিছিয়েছে। এ বিষয়ে ঈদ উল আযহার পর শুনানি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৭ মে) বিচারপতি ফাহমিদা কাদির ও বিচারপতি মুবিনা আসাফ গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৪ মে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের দায়ের করা রিটের প্রতিপক্ষ, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ১৯ জন শ্রমিক 'শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল' ও 'শ্রমিক কল্যাণ তহবিল' থেকে তাদের পাওনা হিসেবে ১৮২২.৯৮ কোটি টাকা দাবি করে হাইকোর্টে আবেদন করেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত গত ১৯ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এরপর এক সপ্তাহ পিছিয়ে ২৭ মে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। এদিন দুপুরে আবেদনের উপর শুনানির জন্য ডাকা হলে ম্যারিকোর সাবেক শ্রমিকদের পক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, বিষয়টি একটু জটিল এবং শুনানির জন্য একটু বেশি সময়ের প্রয়োজন। এরপর হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বিষয়টি ঈদের পরে শুনানির করার নির্দেশ দেন।
একপর্যায়ে ম্যারিকোর পক্ষের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, 'ম্যারিকোর সাবেক শ্রমিকরা তাদের দাবির বিষয়ে আদালতে আবেদন করে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। যার কারণে কোম্পানির অনেক সুনাম ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মহামান্য আদালত যেন একটি আদেশ দেন যে, আবেদনটি নিয়ে তারা যেন আপাতত কোনও সংবাদ সম্মেলন না করে।'
এরপর আদালত বাদী পক্ষের আইনজীবীদেরকে বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে আপাতত কোনও বক্তব্য না দিতে আদেশ দেন।
ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন না করার অভিযোগে ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত কর্মরত প্রাক্তন কর্মচারীদের পক্ষে ১৯ জন বাদী হয়ে ২০১৪ সালে ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করেন। (মামলা নম্বর ৬৯১/২০১৪)। এরপর ২০১৮ সালে ম্যারিকো বাংলাদেশ মামলাটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে ( ৫৭৬/২০১৮)। পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ১৪ মে সাবেক শ্রমিকদের পক্ষে ১৯ জন শ্রম আইনের ২৩৪ ও ২৪০(৩) ধারায় হাইকোর্টে ১৮২২.৯৮ কোটি টাকার দাবিতে আবেদন করেন। আবেদনে মামলার রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত দাবিকৃত টাকা ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ভারতীয় মূল প্রতিষ্ঠান ম্যারিকো লিমিটেডের কাছে যাতে পাঠাতে না পারে সে বিষয়ে আদালতের আদেশ প্রার্থনা করেন।
বাংলাদেশের শ্রম আইনের ২৩৪ ধারায় শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন বাধ্যতামূলক হলেও ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত আইন অমান্য করে তহবিল গঠন করেনি। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে তারা তহবিল গঠন শুরু করে। ম্যারিকো লিমিটেড ইন্ডিয়া, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে গত ১৬ বছরে প্রায় ৩২০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এরমধ্যে ৪১৯.২৯ কোটি টাকা রেমিটযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই রেমিটযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ১০৭৭.৬৪ কোটি টাকা, যা ১৬ বছরের মোট রেমিটযোগ্য টাকার প্রায় ৩৪ শতাংশ। এ অবস্থায় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রাক্তন শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের আগে আর কোনও অর্থ বিদেশে রেমিট না করার নির্দেশ দিতে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়।
বাংলাফ্লো/এসকে
Comments 0