নিজস্ব প্রতিবেদক: এয়ার টিকেটের দাম কমানোর পাশাপাশি যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাল্ক টিকেট বিক্রি ও মজুদদারি বন্ধের দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান অন্যতম বড় সমস্যা এয়ার টিকেটের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি। এই মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ নামবিহীন গ্রুপ টিকেট বুকিং।” তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যগামী কিছু এয়ারলাইন্স তাদের পছন্দের কিছু সংখ্যক এজেন্সির নামে কোন প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র, এবং প্রবাসগামী শ্রমিকদের কোনো প্রকার বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই শুধু ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট ২ থেকে ৩ মাস অগ্রিম তারিখের প্যাসেঞ্জার নেম রেকর্ড (পিএনআর) তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে। “এভাবে টিকেট মজুদদারি করার ফলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়, আসন সংকট দেখা দেয়, টিকেট মূল্য ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ, কখনো দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ে এবং বিদেশগামী শ্রমিক, স্টুডেন্ট, প্রবাসীরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন।” তিনি বলেন, “মূলত মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইটের তারিখের অনেক আগেই আসন বিক্রি নিশ্চিত করা এবং অধিক মুনাফার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করে। “রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, ওমান, দোহা, কুয়ালালামপুরসহ বিভিন্ন রুটের সিট ব্লক করে রাখে। যেমন: ওমরাহ, বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই ধরনের নাম ছাড়া ওপেন গ্রুপ সিট বিক্রয় করে।” এসব সেক্টরের টিকেট ব্লক করলে তার সরাসরি প্রভাবে অন্যান্য রুটের (যেমন লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, ইউরোপ, আমেরিকা) এয়ার টিকেটের মূল্যও বাড়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো এ ধরনের নাম ছাড়া গ্রুপ বুকিং করে তাদের পছন্দের গুটিকয়েক এজেন্সির মাধ্যমে বাজারে টিকেট বিক্রি করে। এতে মার্কেট মনোপলি তৈরি হচ্ছে।” এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইটের সংখ্যা কমানোর কারণেও টিকেটের দাম বাড়ছে বলে জানান আটাব সভাপতি। তিনি বলেন, “অনেক এয়ারলাইন্স তাদের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইট স্লটও ব্যবহার করছে না। তারা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে চাহিদা যোগানের ভারসাম্য নষ্ট করেছে।” আবদুস সালাম আরেফ বলেন, “জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের পর দেশের ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড যাত্রী পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেশ থেকে বহির্গমন ও আগমনের হার কমে যায়। ফলে এয়ারলাইন্সগুলো তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। “সম্প্রতি দেশের সর্বস্তরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসায় পর্যটকদের বহির্গমন ও আগমনের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সাথে সাথে যাত্রীদের ফ্লাইটের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের সংখ্যা কম হওয়ায় আসন সংকট দেখা দিচ্ছে এবং টিকেটের মূল্য অসহনীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।” তিনি বলেন, এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, জাজিরা এয়ার, ওমান এয়ার, সৌদি এয়ারলাইন্স আগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে সপ্তাহে ৯৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও এখন পরিচালনা করছে ৪৬টি। ফ্লাইট কমিয়েছে ৫২টি। এছাড়া, ফ্লাইনাস সপ্তাহে ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে। তার ভাষ্য, আগে এসব এয়ারলাইন্স ২২০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার বড় এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করত। কিন্তু এখন অধিকাংশ ফ্লাইটে ১৬৮ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার ছোট এয়ারক্রাফট ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে প্রায় ১ হাজার ৬০০ আসন কমে গেছে।