শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশের বিভিন্ন স্থানে কেএফসি-পিৎজা হাটসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ভাংচুর

ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে এ সব স্থানে ভাংচুর করা হয়।

সিলেটে কেএফসি আউটলেটে ভাংচুর

বাংলা ফ্লো ডেস্ক

ঢাকা: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে কেএফসি, পিৎজা হাট ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে এ সব স্থানে ভাংচুর করা হয়।

সোমবার (৭ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করা হয়।

চট্টগ্রামে কেএফসিতে জুতা নিক্ষেপ, ব্র্যাক ব্যাংক ভাঙচুরের চেষ্টা

চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে কেএফসি রেস্তোঁরা এবং কোকাকোলার সাইনবোর্ড সম্বলিত একটি ভবনে ইট-পাটকেল এবং জুতা নিক্ষেপ করেছে বিক্ষোভকারীরা। এতে ওই রেস্তোঁরা এবং ভবনের সামনের অংশের কাঁচ ভেঙে যায়। এ ছাড়া নগরীর কাজীর দেউড়ী এলাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা ভাংচুরের চেষ্টা করে তারা।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েলবিরোধী কয়েকটি বিক্ষোভ মিছিল থেকে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইনকিলাব মঞ্চ ও হেফাজত ইসলামের পাঁচলাইশ থানা শাখার উদ্যোগে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল জিইসির দিকে রওয়ানা হয়। এতে সাধারণ মানুষসহ হাজারেরও বেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মিছিলটি নাসিরাবাদ অতিক্রম করার পরই সানমার ওশান সিটি শপিংমল সংলগ্ন কেএফসি রেস্তোঁরার সামনে থেমে যায়। একপর্যায়ে মিছিল থেকে জুতা ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে রেস্তোঁরার সামনের অংশের কাঁচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তবে ভেতরে কেউ ছিল কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এরপর মিছিলটি অগ্রসর হয়ে জিইসি মোড় ঘুরে দুই নম্বর গেইটের দিকে যায়। এরপর আবারও জিইসি মোড়ে হোটেল জামান সংলগ্ন পাঁচলাইশ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়ের ওপরে থাকা ‘কোকাকোলা’র সাইনবোর্ডে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় ওই ভবনের কাঁচও ভেঙে পড়ে যায়। এরপর সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর মিছিলটি দুই নম্বর গেট অভিমুখে যাত্রা করে।

এ ছাড়া, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কাজীর দেউড়ী এলাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা ভাঙচুরের চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সেখান থেকে সরে যায়।

বরিশালে কেএফসিতে ভাঙচুর

ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা দেওয়া কেএফসির বরিশাল ব্রাঞ্চে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ছাত্র-জনতা কেএফসির কার্যক্রম বরিশাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনের সড়কে ছাত্র-জনতার ব্যানারে কর্মসূচি শুরু হয়। সড়ক অবরোধ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কে কেএফসির সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা অবস্থান নেয়। তারা অভিযোগ করেন, কেএফসি ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা করে। যে অর্থের একাংশ যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। জনতা কেএফসি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা কেএফসির সামনের সড়কে জোহরের নামাজ আদায় করেন এবং মোনাজাতে গাজাবাসীর জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্রতিষ্ঠানটির ছাদে উঠে কেএফসির লোগো ভেঙে ফেলেন এবং ব্যানার নিয়ে যান। এছাড়া দেয়ালে বয়কট কেএফসি লিখে দেন তারা। তারা রেস্টুরেন্টটির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধরা কেএফসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। কেএফসির লোগো ভেঙে ফেললেও বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।

সিলেটে কেএফসি, ডোমিনোস পিজ্জা ও বাটার আউটলেটে ভাঙচুর

ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সিলেটে কেএফসি, বাটা ও ডোমিনোস পিজ্জার আউটলেটে হামলা ও ভাঙচুর করেছে তৌহিদি জনতা।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে সিলেটের মিরবক্সটুলায় অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্ট ও চৌহাট্টাস্থ ডোমিনোস পিজ্জার আউটলেটে ভাঙচুর চালানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ কর্মসূচির সমর্থনে দুপুর থেকেই সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে তৌহিদি জনতা। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে সিলেটের মিরবক্সটুলায় অবস্থিত কেএফসি ও চৌহাট্টার ডোমিনোস পিজ্জা ও বাটার আউটলেটে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুরকালে কেএফসির দেওয়ালে ফিলিস্তিনের পতাকা সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। হামলাকালে কেএফসির পার্শ্ববর্তী অন্য আরেকটি রেস্টুরেন্টে হামলা করা হয়। এ সময় বেশ কিছু কোমল পানীয় ধ্বংস করে দেন তারা। পরে তারা সামনের সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক জানান,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ কাজ করছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ।

বগুড়ায় ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে দোকানে ভাঙচুর

বগুড়ার ইসরায়েলি পণ্য বাটা শোরুমসহ দেশটির কোমল পানীয় রাখা দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) শহরের সাতমাথা এলাকায় ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা।

জানা যায়, সোমবার শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা মুক্তমঞ্চে পালিত হয়েছে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি। কর্মসূচি চলাকালে সাতমাথায় ইসরায়েলি পণ্য বাটা শোরুমসহ আশপাশে কয়েকটি দোকানে ইসরায়েলি কোমল পানীয় রাখায় দোকান ভাঙচুর করে আদোলনকারীরা।

সকাল ১১টা থেকে মুক্তমঞ্চ ঘিরে চলতে থাকে মিছিল ও সমাবেশ। কর্মসূচি চলাকালে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদসহ ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের নানা রকম স্লোগান দেওয়া হয়। কর্মসূচি চলাকালে আবেগ আপ্লুত হয়ে সাতমাথা এলাকায় ইসরায়েলি পণ্য রাখা দোকান বাটা শোরুমসহ আশপাশে কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে।

বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মঈনুদিন জানান, বিক্ষোভ মিছিল থেকে দু-একজন বাটার শোরুমের কাচে ঢিল ছুড়ে মারে। এতে কিছু কাচ ভেঙে যায়। তবে সার্বিক পরিবেশ শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রেস্টুরেন্টে ভাংচুর

রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডে ইসরায়েলী ব্র্যান্ড কোকাকোলার নাম থাকায় ইট-পাথর নিক্ষেপ করে গ্লাস ভাংচুর করা হয়।

সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভুলতা গাউসিয়া এলাকায় পানসি রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সোমবার বিকালে ফিলিস্তিনের মুসলিম নগরী গাজার উপত্যকায় রাফা শহরের মুসলিমদের উপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন, গণআন্দোলন ও প্রতিবাদ সভা করে রূপগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষজন। এসময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সামাজিক সংগঠন, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণীর হাজার হাজার মানুষ আন্দোলনে অংশ নেয়।

প্রতিবাদ সভা শেষে ভুলতা গোলচত্তর থেকে মিছিল নিয়ে গোলাকান্দাইল স্ট্যান্ড প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসার পথে তাঁত বাজার এলাকায় ওই রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডে কোকাকোলার নাম দেখে ক্ষুদ্ধ হয় আন্দোলনকারীরা।

একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা এলোপাতাড়ি ইট ও পাথর নিক্ষেপ করে রেস্টুরেন্টের গ্লাস ভাংচুর করে। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সদস্য, সেচ্ছাসেবী ও ইসলামিক সংগঠনের নেতারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ড থেকে কোকাকোলার নাম সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানান।

সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের কোথাও ইসরায়েলি পন্য বিক্রয়, বিপণন কিংবা ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের পাশাপাশি তাদের সাথে সকল প্রকার ব্যবসায়িক চুক্তি বা সম্পর্ক বাতিল করার আহ্বান জানান বক্তারা।

বাংলাফ্লো/এসবি

Leave a Comment

Comments 0