লাইফস্টাইল ডেস্ক
ঢাকা: আমাদের খাদ্য উপাদানের মধ্যে সর্ববৃহৎ অংশ জুড়ে আছে ভাত, যা আমাদের শক্তি জোগায় এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। আপনি জেনে অবাক হবেন, ভাতের চাল ধোয়া পানি উজ্জ্বল ত্বকের এক অনন্য রহস্য। রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে, চাল ধোয়া পানিতে কোনো কেমিক্যাল নেই, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও কম। দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল পেতে নিয়মিত ব্যবহার জরুরি।
একসময় গ্রামবাংলার মানুষ চাল ধোয়া পানি দিয়ে রূপচর্চা করতেন। এটি এশীয় সংস্কৃতির প্রাচীন এক পদ্ধতি বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়ায় রূপচর্চার প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে চাল ধোয়া পানি ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রাচীন চীনের রাজপরিবারের নারীরাও তাদের চুল ও ত্বকের যত্নে চাল ধোয়া পানি ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া কোরিয়ান হারবাল মেডিসিন হিসেবে চাল ধোয়া পানির বেশ প্রচলন ছিল। আধুনিক স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডগুলোর দাপটে সেই প্রাকৃতিক রূপচর্চার প্রচলন অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ প্রাকৃতিক রূপচর্চার পদ্ধতি।
চাল ধোয়া পানির কার্যকারিতা
ত্বক উজ্জ্বল ও দাগ হালকা করে: চাল ধোয়া পানিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ফেরুলিক এসিড এবং এনজাইমের মতো অসংখ্য পুষ্টি উপাদান, যা ত্বককে কাচের মতো চকচকে করে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের কার্যকারিতা বাড়ায়, মৃত কোষ দূর করে, ত্বকের রঞ্জকতা কমাতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন ত্বকের চিকিৎসা করে: ত্বকের যত্নে চাল ধোয়া পানি একটি পরীক্ষিত রহস্য, যা প্রাচীন সভ্যতাগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্যবহার করে আসছে। এটি ত্বকের প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া কমায় এবং সেই সঙ্গে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে। এটি ত্বকের একজিমা এবং ডার্মাটাইটিসের কারণে সৃষ্ট জ্বালাপোড়াও প্রশমিত করতে পারে। মুখের ব্রণ দূর করতেও এটি একটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে: চালের পানিতে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং এবং হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য, যা সামগ্রিকভাবে ত্বকের গঠন উন্নত করতে চমৎকারভাবে কাজ করে। এক্সফোলিয়েটিং বৈশিষ্ট্য মৃত কোষ অপসারণ করে নতুন কোষের জন্ম দেয়; যার ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। অর্থাৎ আপনার ত্বক শুষ্ক, তৈলাক্ত বা মিশ্র যাই হোক না কেন, এটি আপনার ত্বকের যত্নে অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করে। তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করতেও এটি কার্যকর।
বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে: চাল ধোয়া পানিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বককে ফ্রি রেডিক্যাল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। ফলে অকালবার্ধক্য রোধ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, চালের পানিতে এমন উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের ফাইব্রোব্লাস্ট কোষকে ইউভি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
ছিদ্র সংকুচিত করে: সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, চাল ধোয়া পানি একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক টোনার, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বেশ কিছু সভ্যতা ব্যবহার করে আসছে। এটি ফেস ক্লিনজারের অবশিষ্ট ময়লা দূর করতে এবং ছিদ্রগুলোকে শক্ত করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটিকে সিরাম হিসেবেও ব্যবহার করা যায়, যা অতিরিক্ত ছিদ্রগুলোকে সংকুচিত করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
আইসকিউব হিসেবে ব্যবহার
চাল ধোয়া পানি ফ্রিজে রেখে আইসকিউব বানিয়ে নিন। এ গরমে রোদ থেকে বাড়ি ফিরে মুখ ধুয়ে ফেলুন; অতঃপর আইসকিউবটি গোটা মুখে ঘষে নিন। এতে ত্বকের সতেজতা ফিরে আসবে।
টোনার হিসেবে ব্যবহার
ত্বকের প্রাণবন্ত, সতেজতা ফিরে পেতে কেবল ৩০ মিনিটের জন্য পানিতে চাল ভিজিয়ে প্রথম ধোয়া পানি ফেলে দিন। তারপর দ্বিতীয় ধোয়া পানি ছেঁকে নিয়ে সরাসরি ত্বকে লাগান। এটি আপনার ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করবে।
ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার
চাল ধোয়া পানির সঙ্গে বেসন ও চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের সতেজতা ফিরে আসবে।
ফেস মিস্ট হিসেবে ব্যবহার
একটি স্প্রে বোতলে চাল ধোয়া পানি নিয়ে তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখুন। বাইরে থেকে ফিরে দিনে কয়েকবার এটি ত্বকে রিফ্রেশ করার জন্য ছিটিয়ে দিন।
প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে চাল ধোয়া পানি হতে পারে একটি সহজ সমাধান ও নিরাপদ উৎস। এটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের জৌলুস টিকে থাকবে।
বাংলাফ্লো/এসকে
Comments 0