Logo

নির্বাচনের দিনক্ষণের ঘোষণা কী আসবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে?

সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই ঘোষণা হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। আর এরপরে পেরিয়ে যাচ্ছে প্রায় এক বছর। আর এর মাঝে যে বিষয়টি নিয়ে সবচাইতে বেশি আলোচনা তা হলো জাতীয় নির্বাচন। কবে অনুষ্ঠিত হতে পারে জাতীয় নির্বাচন—এই প্রশ্নই ঘুরছে সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে চায়ের দোকানের আড্ডায়ও।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই ঘোষণা হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ। আর তারই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলের নেতারা ভাবছেন গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকারের একাধিক সূত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, খুব দ্রুতই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা। আর তাই রাজনীতিবিদদের আশা, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করবে সরকার।

তবে নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়েও আছে নানা ধরণের মতামত। আর তা নিয়েই এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এই লক্ষ্যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করবে কমিশন। এরই মধ্যে জুলাই সনদের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

আর তাই রাজনীতিবিদরা বলছেন, ৫ আগস্টের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করার বিষয়টি এখন অনেকটাই নিশ্চিত।

তবে কিছু দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনসহ কিছু বিষয় নতুন করে সামনে আনার বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখেছে বিএনপি।

রোববার (২৮ জুলাই) সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সোমবারের মধ্যে জুলাই সনদের খসড়া দলগুলোকে পাঠানো হবে। জাতীয় সনদ সইয়ের জন্য চলমান আলোচনায় একটি দিন বরাদ্দ রাখা হবে।

এ সময় সনদের খসড়া নিয়ে সংলাপে আলোচনা করা হবে না বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, যদি বড় রকমের মৌলিক আপত্তি ওঠে, তাহলে আলোচনায় আনব, না হলে আনব না। আপনাদের (রাজনৈতিক দলগুলো) পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হলে সেটা সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক সনদে ভূমিকা-পটভূমি থাকবে এবং অঙ্গীকারের জায়গা থাকবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে দেখা যাওয়া অনৈক্য দূর করতে সরকারিভাবে খুব দ্রুতই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে।

তাহলে নির্বাচন কবে হবে?

দেশে ঈদুল আজহা’র আগে ও পরে সম্ভাব্য নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকমের আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একাধিক শীর্ষ নেতা সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করেন।

১৩ জুন যুক্তরাজ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

এরপরে কিছুদিন বিএনপি নেতারা সেই বৈঠকের আশ্বাসে রাজনীতির মাঠে নির্বাচনের দাবি জানালেও এ বিষয়টি নিয়ে ধীরে চলো নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের বৈঠকের ঘোষণার পর নির্বাচনের দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকায় বিএনপির নেতাদের মধ্যে একধরনের সংশয় তৈরি হয়।

বিশেষ করে সরকারের দিক থেকে ইসিকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না দেওয়ায় নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ–অবিশ্বাস বাড়ছিল।

এরই মাঝে কিছু দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনসহ কিছু বিষয় নতুন করে সামনে আনা হয়। এ বিষয়টিও সন্দেহের চোখে দেখেছে বিএনপি।

সর্বশেষ ২২ জুলাই থেকে তিন দফায় বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

এর মধ্যে ২৬ জুলাই ১৪টি দল-জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন প্রধান উপদেষ্টা। এই বৈঠক শেষে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিক্যালি (সুস্পষ্টভাবে) বলেছেন, তিনি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা, তারিখ ঘোষণা করবেন। আলোচনার সবচেয়ে ফলপ্রসূ বিষয় হচ্ছে এটা। দেশে যে অরাজকতা, তার একমাত্র সমাধানের পথ নির্বাচন—এটা সরকার বুঝতে পেরেছে।’

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়কারী মোস্তফা জামাল হায়দারের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ বা নির্দিষ্ট সময়সীমার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

তবে ২৬ জুলাই ১৪টি দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে প্রেস উইং একটি বক্তব্য পাঠায়।

গণমাধ্যমে পাঠানো সেই বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে কিছু না থাকলেও নির্বাচন প্রসঙ্গে একধরনের উদ্বেগ ছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভণ্ডুল করার অপচেষ্টা করছে উল্লেখ করে ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

এমন অবস্থায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আসলেই কী বলেছেন, সেটা আমরা স্পষ্ট করে জানি না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তারপরও নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হবে অপরিপক্বতা।

তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশা দেখা যাচ্ছে তা দূর করার জন্য হলেও খুব দ্রুত তারিখ ঘোষণা করা প্রয়োজন। ফ্যাসিস্ট শক্তি যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য দেশের সকল রাজনৈতিক শক্তির মাঝে প্রয়োজন ঐক্য। আর সেই ঐক্য ধরে রাখতে প্রয়োজন জাতীয় নির্বাচন ও তার প্রস্তুতি দৃশ্যমান করা। আর তাই আশা করা হচ্ছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মাঝেই ঘোষণা করা হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ।

বাংলাফ্লো/সিএস

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0