বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: এখন থেকে সরকারি জমি কাউকে প্রতীকী মূল্যে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকারি জমি যারাই নিতে চাইবে অর্থ দিয়ে নিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম এরিয়ায় বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) বা বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা সম্প্রসারণের জন্য বন্ধ থাকা চট্টগ্রামের জলিল টেক্সটাইল মিলসের ৫৪.৯৯ একর জমি প্রতীকী মূল্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তরের একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে উপস্থান করা হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জলিল টেক্সটাইল মিলস সেনাবাহিনী নিতে চাচ্ছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি প্রতীকী মূল্যে দেবো না। এখন থেকে প্রতীকী মূল্যটা অ্যাভয়েড (এড়িয়ে চলা) করবো। যারাই নিতে চায় অর্থ দিয়ে নেবে। কারণ প্রতীকী মূল্যে দিলে যারা নিয়ে যায়, তারা ঠিকমতো ইউটিলাইজ করে না।
তাহলে কি জলিল টেক্সটাইল মিলসের জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়নি? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাদেরকেই দেওয়া হবে, তবে মূল্যটা নির্ধারণ করে প্রস্তাব আসতে হবে।
এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয় বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কিনতে কত খরচ হবে? তবে এর কোনো উত্তর দেননি অর্থ উপদেষ্টা।
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন- বোয়িং দিয়ে তো বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে না। আর কী কী যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হবে? এর উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আরও আছে, ওই প্যাকেজ নিয়ে গেছে, কী কী কিনতে হবে।
সামরিক সরঞ্জাম কেনা হবে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেটা আমি বলবো না। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনকে প্রশ্ন করেন।
এদিকে বৈঠক শেষে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম এরিয়ায় বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলের নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম জেলার ভাটিয়ারিতে অবস্থিত জলিল টেক্সটাইল মিলস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যক্তি মালিকানায় ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় মেসার্স জলিল টেক্সটাইল মিলস স্থাপন করা হয়। মিলসটির জমির পরিমাণ ৫৪.৯৯ একর। ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করার পর উইভিং এবং ডাইং বিভাগ স্থাপনের মাধ্যমে মানসম্মত উৎপাদনের জন্য ৩ বার স্বর্ণপদক লাভ করে মিলটি।
লাভজনকভাবে পরিচালিত মিলটি বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতিমালার আওতায় ১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মিলের সাবেক শেয়ার হোল্ডারদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। মালিকপক্ষের মধ্যে অন্তর্কলহের কারণে ১৯৯৭ সালে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে তৎকালীন সরকার দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর মিলটি অধিগ্রহণ করে। ওইদিন সরকার মিলের সাবেক ৪০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার সেলিম চৌধুরী গংদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে মিলটি হস্তান্তর করে।
সেলিম চৌধুরী গং মাত্র ১২ লাখ ২২ হাজার টাকা দিয়ে মিলটি অধিগ্রহণের পর হস্তান্তর চুক্তির ৩ নম্বর শর্তানুযায়ী সরকারি পাওনা ৪ নম্বর শর্তানুযায়ী ৬০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ ৫ ও ৬ নম্বর শর্তানুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ, ৮ নম্বর শর্তানুযায়ী ২০০০ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে মিল চালু, ১০ নম্বর শর্তানুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিনিধি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ না করে চুক্তির সব শর্তই লঙ্ঘন করে। সুচতুরভাবে মালিকপক্ষ ২০০০ সালের শেষের দিকে নামমাত্র ১টি ইউনিট চালু করে পরে শ্রমআইন বহির্ভূতভাবে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউনিটটিও বন্ধ করে দেয়।
এ অবস্থায় ২০০৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় মালিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬ মাসের মধ্যে মালিকপক্ষ মিল চালু না করলে হস্তান্তর চুক্তির ১৬ নম্বর শর্তানুযায়ী সরকার মিলটি অধিগ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। মালিকপক্ষ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে ২০০৫ সালের ২০ নভেম্বর সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিলটি বন্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি জলিল টেক্সটাইল মিলস পুনঃগ্রহণ করে সরকার এবং মিলটি বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করা হয়।
জলিল টেক্সটাইল মিলস পুনঃগ্রহণ আদেশের বিরুদ্ধে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সেলিম চৌধুরী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন (নং-২৬৩০/২০১৭) দায়ের করেন। মামলাটি দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এবং বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চ চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ডিসচার্জ করেন অর্থাৎ বিটিএমসির পক্ষে রায় হয়। এ বিষয়ে বিটিএমসির পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
পরে মো. আবদুস সেলিম চৌধুরী আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল (নং-২০৮৯/২০২৫) দায়ের করেন। এই সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত ২৯ জুন শুনানি হয়। এক্ষেত্রে রিট পিটিশনটি ডিসমিস হয়েছে মর্মে সরকারপক্ষের আইনজীবী প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
বাংলাফ্লো/এফএ
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0