স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: শেকল ভাঙার বছর। খেলাধুলার জগতে ২০২৫ সালটাকে এ আখ্যা দিয়ে দেওয়াই যায়। কত দলের, কত পক্ষের আক্ষেপ যে ঘুচল এ বছর। পিএসজি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতল প্রথমবারের মতো, প্রিমিয়ার লিগ যুগে বাংলাদেশে মোহামেডান জিতল ঘরোয়া লিগ শিরোপা, হ্যারি কেইনের শিরোপার আক্ষেপ ঘুচল, ট্রফি কেসে ধুলো জমা টটেনহ্যামের হাতে উঠল ইউরোপা লিগের শিরোপা! এমন সব কীর্তি যখন একই বছরে ঘটবে, তখন বছরটাকে শেকল ভাঙার বছর আখ্যা না দিয়ে কি উপায় আছে?

চলতি বছরে শেকল শুধু পিএসজি, মোহামেডান, টটেনহ্যামই ভাঙেনি শুধু। ক্রিকেটে হোবার্ট হ্যারিকেন্স প্রথম বারের মতো বিগ ব্যাশ জিতেছে। ৫১ বছর পর বোলোনিয়া জিতেছে ইতালিয়ান কাপ, ৭০ বছর পর নিউক্যাসল জিতেছে কারাবাও কাপ শিরোপা। তালিকাটা এখানেও শেষ নয়। ৯২ বছরের ইতিহাসে গো অ্যাহেড ইগলস জিতেছে ডাচ কাপ, ১১৯ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্রিস্টাল প্যালেস জিতেছে এফএ কাপ! এমনকি গত রাতেই তো, আর্জেন্টাইন প্রিমেরা দিভিসিওনের প্রথম পর্বের ফাইনালে জিতেছে আতলেতিকো প্লাতেনসে, যা তাদের ইতিহাসেরও প্রথম শিরোপা।

এতসব আক্ষেপ ফুরোনোর গল্প চলতি বছরই ঘটেছে। সে বছরের আইপিএল ফাইনালে যখন মাঠে নামবে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, তার আগে দলটা আশায় বুক বাধতেই পারে, এ বছর যে অভাগাদের দিয়েছে দু’হাত ভরে!

নিজেদের ইতিহাসে এভাবে আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ কোহলির দল কম পায়নি। সেই দ্বিতীয় আসর থেকে শুরু। সেবার ফাইনালে ডেকান চার্জার্সের ছুঁড়ে দেওয়া ১৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি দলটা, ১৩৭ রানে শেষ হয়েছিল তাদের যাত্রা, হারতে হয়েছিল ৬ রানে। ২০১১ এর ফাইনালে অবশ্য চেন্নাই তাদের হারিয়েছিল ৫৮ রানে। সে বছরই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল দলটা, সেখানেও চেন্নাই তাদের হারিয়েছিল ৩১ রানে, ১৪০ রানের লক্ষ্যও তাড়া করা হয়নি তাদের।

বেঙ্গালুরু আরও একবার সুযোগ পেয়েছিল। বিরাট কোহলির ক্যারিয়ার-সেরা মৌসুমে দলটা ফাইনালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে হেরেছিল। ২০৯ রান তাড়া করতে নেমে ১২.৫ ওভারে ১৪০ রান তুলেও শেষমেশ তাদের থামতে হয়েছিল ৮ রান দূরে। এরপর বছর বছরে তাদের আক্ষেপটা কেবল বেড়েছেই। সেটা এবার এসে ঠেকেছে ১৭ বছরে, টটেনহ্যামের মতো।

টটেনহ্যাম তাদের আক্ষেপটা ঘুচিয়েছে কয় দিন আগে। এবার তবে বিরাট কোহলিদের পালা? এমন প্রশ্নে হয়তো আপনি খানিকটা আপত্তি করতেই পারেন। আজকের ফাইনালে ‘অল রেড ডার্বি’তে তাদের প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব কিংস, আইপিএলের দুর্ভাগাদের তালিকায় তো নাম আছে তাদেরও! ফাইনালে হৃদয়ভঙ্গের ইতিহাস তো তাদেরও আছে! সেটা অবশ্য একবারই।

২০১৪ সালে জর্জ বেইলির হাত ধরে ফাইনালে খেলেছিল দলটা। তবে সেবারের ফাইনালে ১৯৯ রান তুলেও হারতে হয়েছিল শেষমেশ। এরপর থেকে ফাইনাল তো দূর, গ্রুপ পর্বের বাধাই কখনো পেরোনো হয়নি তাদের। এরপর এবারই প্রথম। সে কারণে ফাইনালে বঞ্চনার বেদনায় পোড়ার ইতিহাসটাও তাদের খানিকটা কমই। অন্তত বেঙ্গালুরুর চেয়ে তো বটেই, এক অঙ্কের রানে শিরোপা না জেতার কষ্ট নিয়ে যাত্রা শেষ করতে হয়েছে কোহলিদের, সেটাও একাধিকবার।

নিয়তির বিচারে তাই এবারের ফাইনালে ভাগ্য খুলে যেতে পারে কোহলির বেঙ্গালুরুর। দুর্ভাগ্যের হিসেব কষলে বেঙ্গালুরুই এগিয়ে থাকবে পাঞ্জাব থেকে। ২০২৫ সাল অভাগা, ভাগ্য বিড়ম্বিতদের দিচ্ছে দু’হাত ভরে। বেঙ্গালুরুকেও কি দেবে?

বাংলাফ্লো/এসও