Logo

তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রোমহর্ষক বর্ণনা ভুক্তভোগীর

'কয়েক মিনিট পরে আমরা একটি খুব বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম। সবকিছু কাঁপছিল। ধোঁয়া, ধুলো ছিল সর্বত্র।'

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: আন্তর্জাতিক ডেস্ক ঢাকা: শুক্রবার মাঝরাতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলার জবাবে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যা ইসরায়েলের সামরিক ও অস্ত্র উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হেনেছে।

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় কেঁপে ওঠে ইসরায়েল। দখলদারদের বিভিন্ন শহরে বড় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। সেই বিস্ফোরণগুলো এতই ভয়াবহ যে গোটা শহর কেঁপে ওঠে। এমনই রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন এক ইসরায়েলি।

ভুক্তভোগী এক বাসিন্দা চেন গ্যাবিজন জানান, তিনি সতর্কতা পাওয়ার পর একটি ভূগর্ভস্থ আশ্রয়স্থলে দৌড়ে যান।

তিনি বলেন, কয়েক মিনিট পরে আমরা একটি খুব বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম। সবকিছু কাঁপছিল। ধোঁয়া, ধুলো ছিল সর্বত্র। যথাসময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে না পারলে তারা কেউ বেঁচে থাকতেন না।

ইসরায়েলের চালানো “রাইজিং লায়ন” নামে পরিচিত এই অভিযানে দুটি প্রধান লক্ষ্য ছিল- ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্রের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা এবং তেহরানে সুনির্দিষ্ট হামলার মাধ্যমে সামরিক নেতৃত্বকে দুর্বল করে দেওয়া।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্রুত অগ্রগতি কে থামিয়ে দিতে এই হামলা চালায়। এই হামলার বিষয়ে শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ইরানের জাতিসংঘ দূত আমির সাঈদ ইরাভানি জানান, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

বহু বছরের হুমকি ও সম্প্রতি কয়েক দিনের টান টান উত্তেজনার পর ইসরায়েলের এই হামলা আসে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না। ইসরায়েল একতরফাভাবে এই পদক্ষেপ নেয়।

ইসরায়েলের সামরিক ও অস্ত্র উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলোতে চালানো ইরানের হামলা প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ইরান ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে এবং বেসামরিক জনপদে হামলা চালিয়ে বড় ধরনের ভুল করেছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এর জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইরানের হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত থাকে। এতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয় এবং বহু মানুষকে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যেতে দেখা যায়। ইসরায়েলের জেরুজালেম ও তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে জরুরি তৎপরতা চালাচ্ছে দেশটির উদ্ধারকারী দল।

ইসরায়েলে হামলা নিয়ে ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলি বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযানের সময় কমপক্ষে ১৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।

শনিবার (১৪ জুন) ভোরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কথা বলার সময়, ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) এর প্রধান কমান্ডারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ ওয়াহিদি বলেন, আইআরজিসি এরোস্পেস ডিভিশন কর্তৃক অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।

বাহিদি বলেন, ইরান ফিলিস্তিনের অধিকৃত ভূখণ্ডে একাধিক ইসরায়েলি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।ইরানের হামলায় নেভাতিম ও ওভদা বিমানঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু হয়। এই ঘাঁটিগুলোতেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সেন্টার অবস্থিত। ইরানে হামলার মূল ঘাঁটি হিসেবেও এই দুইটি ব্যবহৃত হয়েছিল। আরও যেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে তেল নফ বিমানঘাঁটি যা তেল আবিবের কাছাকাছি, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, তেল আবিবের সামরিক ও শিল্প স্থাপনাসমূহ।

বাহিদি আরও বলেন, এই অভিযানের জন্য মোট ১৫০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা বহু ধাপে আঘাত হানা হয়েছে।

বাংলাফ্লো/আফি

Leave a Comment

Comments 0