বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: “জুলাই কেন মানি মেকিং মেশিন হবে?”—এ প্রশ্ন কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছুড়ে দিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। রোববার (২৭ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টার এক আবেগঘন লাইভে তিনি এসব কথা বলেন।
উমামা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি সংগঠনের কেন্দ্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। দেশের জন্য কিছু বড় করার চিন্তা থেকেই ফেডারেশন ছেড়ে স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এরপর থেকেই তাকে ডাকা হয়নি, দূরে ঠেলে রাখা হয়। তার ভাষায়, “সম্ভবত আমি প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছিলাম, সেই কারণেই আমাকে বাদ দেওয়া হয়।”
লাইভে উমামা অভিযোগ করেন, আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে কিছু মানুষ এখন সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গা দখল করছেন, চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এখন কি সমন্বয়ক বাহিনী তৈরি হচ্ছে? যারা জায়গায় জায়গায় গিয়ে দখল করে ফেলবে?” তার মতে, এসব ঘটনা আন্দোলনের আদর্শ ও আত্মত্যাগের প্রতি চরম অসম্মান।
উমামা ফাতেমা বলেন, জুলাই-আগস্টের সেই সময়টুকু ছিল এক অমূল্য অভিজ্ঞতা, যেখানে সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। “তখন আমার কল্পনাতেও আসেনি, কেউ এই আন্দোলনকে পুঁজি করে টেন্ডার বা তদবির বাণিজ্য করবে,”—বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। ডিসি নিয়োগ, প্রভাব বিস্তার, এমনকি অর্থনৈতিক সুযোগ আদায়ে আন্দোলনের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই মুখপাত্র।
নিজেকে ঘিরে ওঠা নানা গুজবেরও জবাব দেন উমামা। “অনেকে ভাবে আমি হাজার কোটি টাকা কামিয়েছি। অথচ আমি ভালো পরিবারের সন্তান। স্কলারশিপে পড়েছি, পরিবারের সাপোর্ট আছে। আমার ব্যক্তিগত কিছু চাওয়ার নেই, আমি শুধু দেশের জন্য কাজ করতে চাই।”
আন্দোলনের ভেতরের জটিলতা নিয়ে তিনি বলেন, “সমন্বয়ক পরিচয়ে ৫০-৬০ জনকে দেখা গেলেও, বাস্তবে প্ল্যাটফর্ম চলেছে কিছু গুটিকয় মানুষের আন্তরিকতায়। অনেক সময় দেখেছি, সমন্বয়কদের চেয়ে সাধারণ কর্মীদের সাহায্যই বেশি কার্যকর ছিল।”
উমামা মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শুধু ছাত্রদের নয়, বরং সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্র করে নতুন কাঠামো গড়ার সময় এসেছে। “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত গিয়েছে। এখন দরকার, আরও বড় পরিসরে সবাইকে একত্রিত করার মতো একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম।”
শেষদিকে তিনি বলেন, তার স্পষ্ট বক্তব্যের কারণে অনেক শত্রু তৈরি হয়েছে, অনেকেই তাকে ভুল বুঝেছে। তবে জেলা পর্যায়ে ঘুরে তিনি দেখেছেন—আজও অনেক তরুণ দেশকে গড়ে তুলতে চায়। এই আশাই তাকে ধরে রেখেছে।
বাংলাফ্লো/সিএস
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0